ফাইল ছবি

ভারতীয় রাজনীতিতে ভালোবাসা, সম্মান এবং নম্রতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী।

একইসঙ্গে ভারতকে ‘একক ধারণার’ দেশ হিসেবে বিশ্বাস করার জন্য কট্টরপন্থি গোষ্ঠী আরএসএসের সমালোচনাও করেন তিনি।

সর্বশেষ নির্বাচনে লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান কমিউনিটির সামনে দেওয়া বক্তৃতায় আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেসের আদর্শগত ফারাকের কথা উল্লেখ করে রাহুল বলেন, ‘আরএসএস বিশ্বাস করে ভারত আসলে একটি ধারণা। আর আমরা মনে করি ভারত হলো বহু ধারণার সমন্বয়।’

নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ভারতের ভাষাগত, ধর্মীয় এবং জাতিগত বৈচিত্রের কথাও উল্লেখ করেন লোকসভার বিরোধীদলীয় এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো, আমরা বিশ্বাস করি— প্রত্যেককে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেককে স্বপ্ন দেখার সুযোগ দেওয়া উচিত (এবং) জাতি, ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস নির্বিশেষে প্রত্যেককে তাদের স্থান দেওয়া উচিত।’

রাহুল বলেন, ‘এটাই হচ্ছে লড়াই। নির্বাচনে লড়াইটি পরিষ্কার হয়ে যায় যখন ভারতের লাখ লাখ মানুষ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে— ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সংবিধানকে আক্রমণ করছেন। কারণ আমি আপনাকে যা বলছি তা হলো— রাষ্ট্রের মিলন, ভাষার প্রতি সম্মান, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা, বর্ণের প্রতি শ্রদ্ধা। এই সবই সংবিধানে আছে।’

তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিটি দলের ভেতর থেকেই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং নম্রতা হারিয়ে গেছে। ভাষণে রাহুল গান্ধী বলেন, তার ভূমিকা ছিল ভারতীয় রাজনীতিতে ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং নম্রতার মূল্যবোধকে প্রবেশ করানো।

রাহুল দাবি করেন, সর্বশেষ লোকসভা ভোটের ফলাফলে তার নিজের কিংবা কংগ্রেসের জয় হয়নি, মানুষের ইচ্ছার জয় হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে তার কী ভূমিকা ছিল, সে কথা ব্যাখ্যা করে রাহুল জানান, তিনি মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বোধ জাগাতে চেয়েছিলেন।

এমনকি লোকসভা ভোটের পর মানুষ বিজেপি আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভয় পাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন রাহুল। তার ভাষায়, “(লোকসভা) ভোটের ফলপ্রকাশের পর কয়েক মুহূর্তেই আমরা দেখলাম, ভারতের কেউ আর বিজেপি কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে ভয় পাচ্ছেন না।”

লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় বার বার দেশের সংবিধানকে রক্ষা করার কথা জানিয়েছিলেন রাহুল। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি সংবিধানকে তুলে ধরেছিলাম। মানুষ বুঝতে পেরেছিল, আমি কী বলতে চেয়েছিলাম।”

প্রসঙ্গত, তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন রাহুল গান্ধী। ভারতের এই বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে রয়েছেন ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদাও। আমেরিকায় থাকাকালীন রাহুল ডালাস এবং ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন।

তিনি ভারতীয় প্রবাসীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও একাডেমিক নেতাদের সঙ্গেও দেখা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস মূলত শক্তিশালী ভারতীয়-আমেরিকান প্রবাসীদের আরও সমর্থন পেতে আগ্রহী। আর এই কারণেই কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ এই নেতার চলমান আমেরিকা সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

টিএম