ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জর্ডানের মধ্যকার ক্রসিংয়ে ৩ ইসরায়েলি রক্ষীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরপরই জর্ডানের সাথে সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

অবশ্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং জর্ডানের মধ্যে কিং হুসেন (অ্যালেনবি) সেতু সীমান্ত ক্রসিংয়ে একজন সশস্ত্র ব্যক্তি তিন সীমান্তরক্ষীকে হত্যা করার পর জর্ডানের সাথে সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলাকারী রোববার সকালে একটি ট্রাকে করে জর্ডানের পার্শ্ববর্তী আল-কারামেহ শহর থেকে ক্রসিংয়ে এসে পৌঁছায় এবং সীমান্তরক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘আক্রমণের ফলে তিনজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিককে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে’। পরে বার্তাসংস্থা এএফপিকে তারা স্পষ্ট করে বলেছে, নিহতরা ‘নিরাপত্তা রক্ষী হিসাবে কাজ করছিল’ এবং তারা সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনীর অংশ ছিল না।

আল জাজিরা বলছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে অবস্থানরত ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি ক্রসিং পরিচালনা করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হামলাকারীকে ‘নির্মূল’ করেছে।

পরে জর্ডানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত হামলাকারীকে মাহের জিয়াব হুসেইন আল-জাজি হিসাবে শনাক্ত করেছে। তিনি জর্ডানের দক্ষিণ মা’ন গভর্নরেটের হুসেইনিয়া এলাকার বাসিন্দা।

গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে জর্ডান সীমান্তে এই ধরনের হামলার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল। মূলত হামলাটি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বাণিজ্যিক এলাকায় ঘটেছে যেখানে জর্ডানের ট্রাকগুলো দখলকৃত পশ্চিম তীরে প্রবেশ করার পর পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অফলোড করা হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জর্ডান এবং ইসরায়েলের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং হচ্ছে অ্যালেনবি ব্রিজ। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি স্থল সীমান্ত ক্রসিংয়ের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। হামলার ঘটনার পর ক্রসিংটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জর্ডানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এই ক্রসিংটির মাধ্যমে পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ত্রিশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি সেবা পেয়ে থাকেন।

আল জাজিরার নিদা ইব্রাহিম পশ্চিম তীর থেকে বলেছেন, ঘটনাটি এমন এক এলাকায় ঘটেছে ‘যেখানে একজন অপরাধী ভেতরে অস্ত্র নিয়ে যেতে এবং তিনজনকে হত্যা করতে সক্ষম হওয়াকে খুব বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে’।

এছাড়া এই হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন ১০ দিনের প্রাণঘাতী অভিযানের পর কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের জেনিন শহর থেকে চলে গেছে। ইসরায়েলি সেই অভিযানে ফিলিস্তিনিদের বহু বাড়িঘর, রাস্তা এবং পানীয় অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া এতে ৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিমতীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। আর গত বছরের শুরু থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আরও বেড়েছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুতকৃত এএফপির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ৬৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও ১০ হাজার মানুষকে।

এছাড়া টানা ১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল এবং এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি এই নৃশংসতা বিশ্বব্যাপী নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে এবং একইসঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও উঠেছে।

টিএম