ফাইল ছবি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নতুন করে ছড়িয়েছে সহিংসতা। রাজ্যটির জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় ড্রোন ও রকেট হামলার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে এবং এতে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ছয়জনের।

এমন অবস্থায় মণিপুর রাজ্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং। রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যের সাথে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বার দেখা করে এই আর্জি জানান তিনি।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্রিবিউন ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং রোববার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যের সাথে দ্বিতীয়বার দেখা করেছেন এবং রাজ্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষাসহ বেশ কয়েকটি দাবি পেশ করেছেন।

এছাড়া মণিপুরের কুকি-জো গোষ্ঠীগুলো রাজ্যটিতে পৃথক প্রশাসনের বিষয়ে যে দাবি জানিয়ে আসছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নতি স্বীকার না করার জন্যও বীরেন সিং আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ট্রিবিউন ইন্ডিয়া বলছে, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ইউনিফাইড কমান্ডের নিয়ন্ত্রণও চেয়েছেন। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি দল, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ইউনিফাইড কমান্ড পরিচালিত হয় এবং তারা রাজ্যে নিরাপত্তা কার্যক্রমের তদারকি করে।

এছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে শান্তির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এন বীরেন সিং। মূলত গত বছরের মে মাসে জাতিগত সংঘর্ষের পর থেকে একের পর এক সহিংসতায় নিমজ্জিত রয়েছে মণিপুর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিজেপির মধ্যে বিভেদের জল্পনা এবং নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবির মধ্যে রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যের সঙ্গে এন বীরেন সিংয়ের এই বৈঠক হয়। এর আগে শাসক জোটের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে চরমপন্থিদের হামলার অভিযোগের মধ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর সাতজন নিহত হওয়ার পর সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর জানানো দাবির তালিকার মধ্যে কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সাসপেনশন অব অপারেশনস (এসওও) চুক্তি বাতিল করার বিষয়টিও রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় বৈঠকে নেতারা কেন্দ্র ও রাজ্যকে এই চুক্তি বাতিল করতে বলেছিল যাতে নিরাপত্তা বাহিনী কুকি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রায় অভিযান চালাতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন জোটের কিছু বিধায়ক সীমান্তের বেড়া সম্পূর্ণ করার, নাগরিকদের জাতীয় রেজিস্টার তৈরি এবং সমস্ত অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে মণিপুরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত মেইতি এবং কুকি গ্রুপের চরমপন্থিরা বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি একে-অপরকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ড্রোন, রকেট এবং পম্পি বন্দুক ব্যবহার করার পর থেকে এই সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।

ইতোমধ্যে কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (কেএসও) দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মেইতেই সংগঠন আরামবাই টেঙ্গোলের পাশাপাশি মেইতেই লিপুনকে বেআইনি সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করতে বলেছে।

এছাড়া কুকি-জো অঞ্চলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র-সমর্থিত পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে কেএসও। এটি চরমপন্থি গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজশে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।

টিএম