উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির দক্ষিণে অবস্থিত একটি গোপন কারাগারে আটক থাকা এক হাজার অভিবাসীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এসব অভিবাসীকে গোপন কারাগারে শোচনীয় পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল।

আলোচিত এই কারাগারটি ত্রিপোলি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে আশ শোয়ারিফ অঞ্চলে অবস্থিত। শনিবার ঘোষণার পর অভিবাসীদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়া অভিবাসীদের সবাই আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

গোপন ওই কারাগারে আটকে রেখে অভিবাসীদের নিজ দেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দিতে বাধ্য করা হতো। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অভিবাসীদের সেখানে নির্যাতনও করা হতো। অভিবাসীদের মধ্যে নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে শিশুরাও আটক ছিল। 

লিবিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের ফেসবুক পেইজে গোপন কারাগারে অভিযানের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, শত শত অভিবাসীকে অন্ধকার একটি দালানে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দালানটিতে চারটি দেয়াল এবং একটি টিনের ছাদ দেখা যায়। যেখানে বাইরের কোনও আলো প্রবেশ করতে পারে না। কারাগারটির নিচের স্তর দেখা বোঝা যায়, সেখানে অভিবাসীরা মাটিতে কাপড়ের টুকরোয় ঘুমাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ভিডিওতে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ লোকজনের মৃতদেহও দেখা যায়। যেখানে কারও কারও শরীরে দাগ, কাটা দাগ বা পোড়া এবং অন্যদের চর্মরোগের চিহ্ন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। 
এই কারাগারে এক শিশুকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শনাক্ত করা হয়েছিল। 

অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‌‌‘‘আশ শোয়ারিফে আটক অভিবাসীরা তাদের মুক্তির বিনিময়ে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করার লক্ষ্যে সব ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।’’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘পাচারকারীরা খুন, ​​নির্যাতন এবং ধর্ষণ করে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’’

তবে কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের সেবা ও দায়িত্বের বিষয়ে কোনও তথ্য দেয়নি। লিবিয়ায় এই ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত অভিবাসীদের ডিপার্টমেন্ট ফর কমব্যাটিং ইলিগাল ইমিগ্রেশন (ডিসিআইএম) পরিচালিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসব গোপন কারাগারে সাব-সাহারা আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা সহিংসতার শিকার হন এবং তাদের মুক্তির জন্য প্রায়ই শত শত ইউরো মুক্তিপণ দিতে হয় বলে সুনির্দির্ষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ-পূর্ব লিবিয়ার কুফরার একটি বেসরকারি কারাগার থেকে ২০০ অভিবাসীকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া অভিবাসীরাও দাবি করেন, তারা অপহরণকারীদের কাছে সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কুফরা থেকে মুক্তি পেতে অভিবাসীদের পরিবারকে ‘মোটা অঙ্কের অর্থ’ দিতে বাধ্য করার জন্য ‘নিষ্ঠুর নির্যাতন’ করা হয়েছিল।

২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির পতনের পর থেকে বিশৃঙ্খলায় আছে লিবিয়া। লিবিয়ায় এমন গোপন কারাগারের সংখ্যা অনেক। মিলিশিয়ারা অভিবাসনকে অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী অভিবাসীদের রাস্তা, অ্যাপার্টমেন্টে ও কর্মস্থল থেকে অপহরণ করে বন্দি করে রাখতে দ্বিধা করে না। আটকের পর তারা অভিবাসীদের নির্যাতনের ছবি তুলে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে থাকে। যাতে টাকা আদায় করা সহজ হয়। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এসএস