সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতার পর বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে আবারও তৈরি পোশাকের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও পশ্চিমা বিশ্বের গার্মেন্টস ও জুতো কোম্পানিগুলো অর্ডার সাময়িক বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশে পণ্যের অর্ডার কমে যাওয়ায় ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। কারণ বাংলাদেশে তৈরি পোষাক খাতের অনেক কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করে ভারত।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমা বিভিন্ন কোম্পানির অর্ডার এশিয়ার অন্যান্য গন্তব্যের খোঁজ করছে। এর মাঝেই বাংলাদেশে ভারতের তুলা রপ্তানি কমতে শুরু করেছে বলে ভারতের গার্মেন্ট শিল্পখাতের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোববার ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চেন্নাই-ভিত্তিক ভারতীয় তৈরি পোষাক কোম্পানি ফরিদা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিক আহমেদ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‌‌‘‘পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নতুন করে আর কোনও অর্ডার আসছে না। শ্রমিকরা ও প্রশাসন বোঝে, উৎপাদনই তাদের প্রাণ এবং তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্ডার সম্পূর্ণ করার জন্য অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করছেন। এছাড়া অর্ডারকৃত পণ্য সরবরাহের জন্য কিছু সামগ্রী ভারত থেকে আনা হচ্ছে এবং টেকনিশিয়ানরাও ভারত থেকে আসছেন।’’ চেন্নাইয়ের এই কোম্পানির বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে।

আহমেদ বলেন, তাদের কোম্পানির ঢাকা ও চট্টগ্রামের কারখানায় বেশির ভাগ উৎপাদন চলছে। বিক্ষোভে এই দুই এলাকা তুলনামূলক কম বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আগস্টের শুরুতে ব্যাঘাত ঘটেছিল, তবে বর্তমানে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে বাংলাদেশে শুল্ক পরিস্থিতিতে কিছুটা ছাড় থাকায় পশ্চিমা সব অর্ডার আবারও শুরু হবে।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির (সিআইটিআই) মহাসচিব চন্দ্রিমা চ্যাটার্জি বলেন, পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ভারতকে তাদের তৈরি পোশাকের উৎপাদনের বিকল্প হিসেবে দেখছে। তবে এটা অনেক কিছু সরবরাহ করার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে। বর্তমানে ভারতীয় ও বাংলাদেশি পণ্যের মাঝে মান-সহ কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে।

তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের বিষয়ে অনেকেই খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের ওপর এর তাৎক্ষণিক প্রভাব নেতিবাচক হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে আমাদের উৎপাদন উপকরণের রপ্তানি কমে গেছে। তবে আমাদের জাতীয় চাহিদা মেটানোর জন্য পিএলআই ও প্রধানমন্ত্রীর মিত্র প্রকল্পের সরবরাহ সঠিক পথে রয়েছে।

ভারতীয় পোশাক খাতের এক নির্বাহী নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান সংকটের আগেই পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ভারতের দিকে তাকিয়ে ছিল। বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে ইউরোপীয় বাজার ক্রমশ উদ্বিগ্ন রয়েছে। যে কারণে তারা ভারতের বাজারের দিকে তাকিয়ে আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর অর্ডার কিছুদিন আগে থেকেই কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেসব অর্ডার ভারতে সরে আসেনি। এসব অর্ডারের বেশিরভাগই যাচ্ছে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায়। অনেক সুযোগ থাকলেও আমাদের পণ্যের মিশ্রণ পরিবর্তন হচ্ছে না এবং অর্ডারগুলো ভারতে আসছে না।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প খাত থেকে। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তৈরি পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো দুর্বল হওয়ায় বাংলাদেশের ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক শিল্প ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আলোচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও বলেছিলেন, প্রতিবেশি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে ভারতীয় পোষাক ও তৈরি পোষাক শিল্প ‌‌‌‘‘কিছুটা অনিশ্চয়তার’’ মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব সমস্যার সমাধান করবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এসএস