জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ বলেছেন, আগামী কয়েক বছরে জার্মানিতে প্রায় ৫০ হাজার চিকিৎসকের সংকট দেখা দিতে পারে। ইউক্রেন ও সিরিয়া থেকে আসা কয়েক হাজার শরণার্থী চিকিৎসক এর সমাধান হতে পারেন।

কিন্তু আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে জার্মানিতে প্রায় ১২ লাখ ইউক্রেনীয় ও ৯ লাখ ৭২ হাজার সিরীয় শরণার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েক হাজার চিকিৎসক আছেন।

কিন্তু কয়েক বছর জার্মানিতে থাকার পরও মাত্র অল্পসংখ্যক চিকিৎসক দেশটিতে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এর জন্য আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দায়ী করছেন অনেকে।

ইউক্রেনের ওডেসা থেকে আসা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ৪৫ বছর বয়সী ওলেকসি ইউক্রেনস্কির মেডিকেল ডিগ্রি ২০১৬ সালে জার্মানিতে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলছেন, অতীতের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ইউক্রেনীয় শরণার্থী জার্মানিতে আসছেন তাদের জন্য প্রক্রিয়া আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে।

জার্মান দৈনিক ডি ভেল্ট বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় চিকিৎসক জার্মানিতে এসেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৮৭ জন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স পেয়েছেন।

ইউক্রেনস্কি জানান, তাকে শুধু তার সার্টিফিকেট অনুবাদ করতে হয়েছিল। কিন্তু এখন অনেক বেশি কাগজ জমা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এসব কাগজ জোগাড় করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তারপর আবার সেগুলো সব অনুবাদ করা ব্যয়বহুলও আর যুদ্ধে কারও ঘর ধ্বংস হয়ে গিয়ে থাকলে তার পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজ জোগাড় করা আরও কঠিন।’

সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে অনুবাদ করাই শেষ নয়। এরপর সার্টিফিকেট জার্মানির মেডিকেল ডিগ্রির সমকক্ষ কিনা সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। একেক দেশের মেডিকেল শিক্ষায় তাত্ত্বিক পরীক্ষার সংখ্যা ও প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতার সময় একেক রকম হওয়ায় বিদেশি চিকিৎসকদের সাধারণত জার্মানিতে চিকিৎসক হিসেবে কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে আগে ইন্টার্নশিপ করতে হয় বা পরীক্ষা দিতে হয়, কিংবা দুটিই করতে হয়।

জার্মানির চিকিৎসকদের সংগঠন ‘মারবুর্গার বুন্ড’ বিদেশি চিকিৎসকদের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়ার জটিলতার সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রক্রিয়াটির গতি খুব ধীর। এছাড়া বিদেশি মেডিকেল ডিগ্রি যাচাই করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব আছে বলেও মনে করে সংগঠনটি।

২০১৬ সালে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে যাওয়া নির্বাস সুভ এখন গ্যোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জানান, জার্মানির ১৬ প্রদেশের একেকটিতে বিদেশি চিকিৎসকদের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া একেক রকম।

এই অবস্থা লোপ করে একটি একক প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন সুভ।

তিনি ‘সিরিয়ান সোসাইটি ফর ডক্টর্স অ্যান্ড ফার্মাসিস্টস ইন জার্মানির’ একজন সদস্য। সংগঠনটি গত বছর উত্তর জার্মানিতে একটি জরিপ চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ আবেদনকারীকে তাদের ডিগ্রি অনুমোদন পেতে অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

টিএম