ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতার খিদিরপুর থেকে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় একটি বাণিজ্যিক জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনী ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ জনকে উদ্ধার করলেও এখনও ক্যাপ্টেন-সহ অন্তত তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা রাহুল রায় নামের এক কেবিন ক্রু আছেন; যার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল। বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া জাহাজের এই ক্রুকে উদ্ধারে বাংলাদেশের সহায়তা চেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রোববার কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আইটিটি পুমা। সাগর দ্বীপের ৯০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে জাহাজটি ডুবে যায়।

ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতীয় বিমান বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে দেশটির উপকূলরক্ষী বাহিনী। গত রোববার উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ডুবে যাওয়া জাহাজের আশপাশের এলাকা থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করেছে। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন-সহ আরও অন্তত তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ডর্নিয়ার বিমানের সহায়তায় উপকূলরক্ষী বাহিনীল উদ্ধারকারী জাহাজ সারং ও আমোঘ অত্যন্ত বৈরী পরিস্থিতিতে সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী (আইসিজি) বলেছে, ‌‌‘‘ভারতীয় কোস্ট গার্ড দুর্ঘটনার দিন রাতে দ্রুতগতির নজিরবিহীন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে। বিমানবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে চালানো তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানে ১১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।’’

এদিকে, নিখোঁজদের সন্ধান ও উদ্ধারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকুতি জানিয়েছেন জাহাজের ক্রুদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। কলকাতার এলিনা দত্ত নামের এক নারী সাংবাদিক বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আইটিটি পুমা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ রাহুল রায়ের সন্ধান চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাদের অনেকেরই হয়তো এই খবরটি চোখে পড়েছে বা শুনেছেন, রোববার (২৫ আগস্ট) কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ার যাওয়ার পথে এমভি আইটিটি পুমা নামের একটি পণ্যবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ডুবে গিয়েছে। জাহাজে ছিলেন ১৪ জন ক্রু। তার মধ্যে ১১ জনকে উদ্ধার করা গেলেও তিনজনের কোনও খোঁজ নেই। সেই তিনজনের মধ্যে একজন আমার দেবর-আমার ভাই। গত কয়েকদিন নিয়ম অনুযায়ী, অনেক খোঁজাখুঁজি চলেছে কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি। এই খোঁজার ক্ষেত্রে কতটা নিয়ম মানা হয়েছে বা কেন এই ঘটনা সেই নিয়ে অন্তত হাজার খানেক প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার থেকে বেশি জরুরি আমার ভাই রাহুল রায়কে খোঁজা।’’

তিনি বলেছেন, ‘‘জাহাজ কোম্পানির থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাহুলের গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল। জাহাজ থেকে ভেসেলে ওঠার সময় সে লাফ দেয়। কিন্তু হাত থেকে দড়িটা ফসকে গিয়ে স্রোতের টানে ভেসে যায়। উল্লেখ্য, সেদিন প্রচন্ড ঝড় চলছিল। স্রোতের টান ছিল বাংলাদেশ, মিয়ানমারের দিকে। তাই আমার আর্জি আমার বন্ধু তালিকায় যারা আছেন, তাদের কেউ বাংলাদেশ মিডিয়া বা বাংলাদেশের কোনও পাবলিক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকলে প্লিজ রাহুলের এই ছবি আর খবরটা শেয়ার করুন। যদি কোথাও থেকে ওর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়, এই আশা নিয়েই আমার এই পোস্ট।’’

এসএস