এক সময় চাঁদে উত্তপ্ত ও গলিত পাথরের একটি মহাসাগর ছিল। তার অর্থ হলো চাঁদের ভেতরে ও বাইরে লাভা রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-৩ থেকে প্রাপ্ত রাসায়নিক তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করছেন। এরপর বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন। চাঁদ গঠনের পর, চাঁদ অনেক বছর ধরে উত্তপ্ত লাভায় আবৃত ছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন।

সম্প্রতি নেচার জার্নালে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। পুরো চাঁদে উত্তপ্ত লাভার (ম্যাগমা) সমুদ্র ছিল। এটি চাঁদের গঠনের কয়েক কোটি বছর পরের ঘটনা। এই সমীক্ষা এমন সময়ে এসেছে, যখন সমগ্র দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে চলেছে। তার মধ্যেই এই খবর বাড়তি খুশি এনে দিয়েছে।

এই বছর চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণ উদযাপনের জন্য প্রথম জাতীয় মহাকাশ দিবস পালিত হচ্ছে। এখন প্রতি বছর একইভাবে দিবসটি পালিত হবে। আহমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির (পিআরএল) ভূতত্ত্ববিদ সন্তোষ ভি ভাদাভালে বলেন, আমাদের যন্ত্র প্রমাণ করেছে যে, চাঁদে লুনার ম্যাগমা মহাসাগর (এলএমও) ছিল।

চাঁদ একটি উত্তপ্ত লাভার সমুদ্র ছিল

২০০ মিলিয়ন বছর আগে যখন চাঁদ তৈরি হয়েছিল, তখন এটি একটি উত্তপ্ত লাভার সমুদ্র ছিল। ভাদাভালে বলেছেন যে, চন্দ্রযান-৩ এ ইনস্টল করা আমাদের যন্ত্রটি দক্ষিণ মেরু এবং অন্যান্য চাঁদের মিশন থেকে প্রাপ্ত ডেটা বিশ্লেষণ করেছে। তারপরই বিষয়টি সামনে এসেছে। চাঁদের গঠন সম্পর্কে একটি তত্ত্ব ছিল যে, ২০০ মিলিয়ন বছর আগে এটি যখন গঠিত হয়েছিল, তখন তার চারপাশে উত্তপ্ত গলিত পাথরের সমুদ্র ছিল। মানে লাভা।

চাঁদ শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই লাভা পাথরে পরিণত হতে থাকে। এ কারণেই চাঁদের বেশিরভাগ জায়গায় একই ধরনের পাথর পাওয়া যায় বা অনুরূপ ধাতু ও খনিজ। এমনকি এলাকা পরিবর্তন করেও খুব একটা পার্থক্য নেই। চন্দ্রযান-৩ এ স্থাপিত আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার দ্বারা চাঁদের এই রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।

প্রজ্ঞান রোভারের তদন্ত থেকে মিলেছে তথ্য

গত বছরের ২৩ অগাস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করেছিল চন্দ্রযান-৩। এরপর চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ও রোভার নয় দিন অভিযান চালায়। প্রজ্ঞান রোভার শিব-শক্তি পয়েন্টের চারপাশে ১০৩ মিটার ঘুরপাক খেয়েছে। এ সময় রোভারটি ২৩টি জায়গায় থেমেছে ও সেখান থেকে খনিজ, মাটি ও পাথর পরীক্ষা করেছে।

পিআরএল ডিরেক্টর অনিল ভরদ্বাজ বলেন, যাত্রার সময় প্রজ্ঞান রোভার সর্বোচ্চ ১৭৫ মিনিট ধরে ভূ-পৃষ্ঠ পরীক্ষা করেছে, আর ন্যূনতম ২০ মিনিট ধরে এটি করেছে। এটি প্রকাশ করেছে যে চাঁদে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি। এতে আরও খনিজ পাওয়া গেছে, তবে সেগুলো চাঁদের ভেতর থেকে ওপরের দিকে এসেছে। পিআরএল, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার, স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার আহমেদাবাদ এবং শ্রীনগরের হেমবতী নন্দন বহুগুনা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানীরাও এই গবেষণায় জড়িত।

কেএ