দিল্লি বিমানবন্দরে যাত্রীদের দেখা যাচ্ছে (ফাইল ছবি)

সংক্রামক রোগ এমপক্স আতঙ্কে ভারতের সকল বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাথে ভারতের স্থল সীমান্তেও জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগের বিষয়ে ভারতে কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিলো।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমপক্সকে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটির বিমানবন্দরগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছে এবং কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আফ্রিকার দেশগুলোর বাইরে সুইডেন এবং পাকিস্তানে এমপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে ভারতে এখন পর্যন্ত এমপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

লাইভমিন্ট বলছে, তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সীমান্তে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দেশের সমস্ত বিমানবন্দরকে সতর্ক থাকতে বলেছে বলে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।

এছাড়া এমপক্সের লক্ষণ রয়েছে এমন আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সম্পর্কেও কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পিকে মিশ্রের সভাপতিত্বে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের একদিন পরই এই সতর্কতা দেওয়া হলো।

এমপক্সে আক্রান্ত রোগীদের ব্যবস্থাপনা, তাদের আইসোলেশন এবং চিকিৎসার জন্য রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল, সফদারজং হাসপাতাল এবং লেডি হার্ডিঞ্জ হাসপাতালকে নোডাল কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সকল রাজ্য সরকারকে তাদের এখতিয়ারের অধীনে এই জাতীয় মনোনীত হাসপাতালগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অবশ্য বর্তমান মূল্যায়ন অনুসারে, বর্তমান সংক্রমণের জেরে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি কম বলে কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলেছে পিটিআই।

উল্লেখ্য, গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়।

এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।

অত্যন্ত চুলকানো বা ব্যথাদায়ক এই ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। এর ফলে দাগ সৃষ্টি হতে পারে।

সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক। এর আক্রমণের কারণে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখ, চোখ এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।

টিএম