মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডি আর) কঙ্গোতে ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫৭০ জন ছাড়িয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্যামুয়েল রজার কাম্বা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার রাজধানী কিনশাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৭০০ জন এবং এ রোগে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৭০ জন ছাড়িয়েছে। এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে পুরো আফ্রিকা মহাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের সরকারের সঙ্গে এ ইস্যুতে আমাদের আলোচনা চলছে।”

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডি আর কঙ্গোতে শুরু হয়েছে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব। দেশটির মোট প্রদেশের সংখ্যা ২৬টি, জনসংখ্যা ১০ কোটি। এই ২৬ প্রদেশের মধ্যে দক্ষিণ কিভু, উত্তর কিভু, শোপো, একুয়াটিউর, উত্তর উবাঙ্গি, শুয়াপা, মঙ্গালা এবং সানকুরু প্রদেশে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।

ইতোমধ্যে ডি আর কঙ্গোর প্রতিবেশী দেশ বুরুন্ডি, কেনিয়া, রুয়ান্ডা এবং উগান্ডাতেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে জুলাই মাসে। রোগটির সংক্রমণ ঠেকাতে গত বুধবার জরুরি অবস্থা জারি করেছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আদ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার।তার পর একসময় মানবদেহেও সংক্রমিত হওয়া শুরু করে রোগটি।

স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণীর একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— ক্ল্যাড – ১ (মধ্য আফ্রিকান) এবং ক্ল্যাড- ২ (পশ্চিম আফ্রিকান)। এই রোগে প্রতি ১০০ আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ জনের।

রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলা।

মাঙ্কিপক্স রোগের জন্য এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, স্মলপক্স বা জলবসন্তের জন্য ব্যবহারযোগ্য টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর।

কঙ্গোতে রোগটির সাম্প্রতিক উল্লম্ফন ঠেকাতে সেখানে ৫০ হাজার টিকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপানও ৩৫ লাখ টিকা পাঠাতে সম্মত হয়েছে।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকার চালান এসে পৌঁছালেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করবে সরকার।

“আমাদের এই সমস্যার সমাধান হলো টিকা। আমাদের টিকাদান কর্মসূচীর যাবতীয় কৌশলগত পরিকল্পনার কাজ শেষ। এখন শুধু টিকার চালানের অপেক্ষ। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই টিকাদান কর্মসূচি আমরা শুরু করতে পারব,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন স্যামুয়েল রজার কাম্বা।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ