রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হামলার পরে গ্লুশকোভো জেলার সেম নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়েছে বলে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে। গত শনিবারের ছবি

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। এর মধ্যেই রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে আরও এক সেতু ধ্বংস করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

গুঁড়িয়ে দেওয়া এই সেতুটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় সেতু ধ্বংস করল ইউক্রেনীয় সেনারা। সোমবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ইউক্রেন বলেছে, তারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানকার দ্বিতীয় আরেকটি কৌশলগত সেতু ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রোববার ওই সেতুতে হামলার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে।

এই সেতুটি কুরস্ক অঞ্চলের জভানোয়ের সেম নদীর ওপরে ছিল বলে জানা গেছে। অবশ্য হামলাটি ঠিক কখন হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কুরস্কে সামরিক অনুপ্রবেশ ও হামলার পেছনে যেসব লক্ষ্য রয়েছে, তার মধ্যে (ইউক্রেনে) রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধ করার জন্য একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করার লক্ষ্যও রয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এটিই রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুপ্রবেশ। মূলত ২০২২ সালে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ইউক্রেন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার ভূখণ্ডে এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকোলা ওলেশুক রুশ সেতুতে হামলার ফুটেজসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘আরও একটি সেতু ধ্বংস করা হয়েছে।’

জেনারেল ওলেশুক আরও বলেছেন: ‘ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী অবিরত সূক্ষ্ম বিমান হামলার মাধ্যমে শত্রুদের লজিস্টিক সক্ষমতা থেকে ধ্বংস করে চলেছে, যা যুদ্ধের গতিপথকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে।’

এর আগে এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন গ্লুশকোভো শহরের কাছে সেম নদীর ওপর আরেকটি সেতু ধ্বংস করে। এই সেতুটি সৈন্য সরবরাহের জন্য ব্যবহার করছিল রাশিয়া।

এদিকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় ঢুকে পড়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে- তারা সেখানে থাকার পরিকল্পনা করছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত শনিবার বলেন, তার সৈন্যরা কুরস্কে অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে এবং রাশিয়ায় আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন: ‘কুরস্ক অঞ্চলে আমাদের অভিযান রাশিয়ান সেনাবাহিনী এবং রাশিয়ান রাষ্ট্র, তাদের প্রতিরক্ষা শিল্প এবং তাদের অর্থনীতির ক্ষতি করছে।’

তিনি বলেছিলেন, ‘এটি ইউক্রেনের জন্য কেবল প্রতিরক্ষার চেয়েও বেশি কিছু’ এবং বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল ‘যতটা সম্ভব রাশিয়ান যুদ্ধের সম্ভাবনা ধ্বংস করা এবং সর্বাধিক পাল্টা আক্রমণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া’।

অবশ্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুরস্কে প্রবেশ করা ইউক্রেনের ২ হাজার ৮৬০ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া ধ্বংস করা হয়েছে ৪১টি ট্যাংক, ৪০টি সাজোঁয়া যান।

গত শুক্রবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী ২৩টি ইনফ্রেন্টারি ফাইটিং যান, ২১৩টি সাজোঁয়া যুদ্ধযান, ১০২টি গাড়ি, চারটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম, ছয়টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, দুটি পরিবহন এবং লোডিং গাড়ি, ২২টি ফিল্ড আর্টিলারি গান এবং তিনটি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্টেশন হারিয়েছে।

টিএম