আরজি কর হাসপাতালে মধ্যরাতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে কলকাতা পুলিশকে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আরজি করে যে গুন্ডামি হল, তা সব মাত্রা ছাড়িয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছি। তাদের রাজনৈতিক যোগ যা-ই হোক না কেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য। সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া তাঁদের ন্যূনতম দাবি। এটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’

এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার শহরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচি শুরু হওয়ার খানিক পরেই আর জি কর হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে। একদল ব্যক্তি ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়।

আর জি করে প্রতিবাদীদের ধর্নামঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ইট-পাটকেলে জখম হন কয়েক জন পুলিশ সদস্য। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। ‘রাত দখলের’ কর্মসূচির মধ্যেই এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়।

হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কলকাতার পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল। এলাকা ঘুরে ‘ক্রুদ্ধ’ বিনীত বলেন, ‘‘ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’

এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কমিশনার। তিনি বলেন, “কলকাতা পুলিশ কী করেনি। আরজি করের ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ সব কিছু করেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে এই কথা বলছি। আমার সহকর্মীরা দিন-রাত এক করে দিয়ে এই তদন্তের কিনারা করার চেষ্টা করেছেন। তারা প্রমাণ সংগ্রহে কোনও রকম ত্রুটি রাখেননি। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা ওই চিকিৎসকের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নানা রকম গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ভুল প্রচারে কলকাতা পুলিশের সম্মানহানি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সিপি।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে দায়ী করেছেন। এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃণমূলের গুন্ডাদের পাঠিয়েছিল একটি রাজনৈতিক মিছিলে। ওঁর ধারণা, ওঁর গুন্ডারা আন্দোলনকারীদের ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে গুন্ডামি করবে আরজি কর হাসপাতালে এবং মানুষ কিছু বুঝতে পারবেন না। পুলিশ গুন্ডাদের পালানোর রাস্তা করে দিয়েছে। যে সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে, সেখানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যাতে সিবিআই সেই সব প্রমাণ না পায়। কিন্তু প্রতিবাদীদের মঞ্চ ভাঙচুরেই এই বোকা গুন্ডাদের যাবতীয় কীর্তি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। কেউ আন্দোলনে যোগ দিতে এসে কেন আন্দোলনের ভরকেন্দ্রে হামলা চালাবে? রাজ্যের এত জায়গায় প্রতিবাদ হচ্ছে, কেন শুধু আরজি করেই‌ হামলা হল?’’

সূত্র : আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ