হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরান সফরকালে নিহত হন

সম্প্রতি ইরানে গুপ্তহামলায় হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়েছেন। এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য হামাস ও ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করেছে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

এমন অবস্থায় ইসরায়েলে হামলা না চালাতে ইরানকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির তৎপরতার মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত সোমবার টেলিফোন কথোপকথনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে ইসরায়েলে ‘সামরিক হামলার চলমান হুমকি থেকে সরে আসার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অনুসারে, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘অপরাধ বন্ধ করার উপায়’ হিসেবে প্রতিশোধ নিতে হবে এবং এটি ইরানের ‘আইনি অধিকার’।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন দেশটিকে ‘নৃশংসতা চালিয়ে যেতে’ উৎসাহিত করেছে এবং শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

ইরনা আরও জানিয়েছে, ‘পেজেশকিয়ান বলেছেন- ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মনে করে, বিশ্বের যে কোনও অংশে যুদ্ধ কোনও দেশের স্বার্থে ভালো নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আক্রমণকারীকে শাস্তিমূলক জবাব দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর একটি আইনি অধিকার এবং একইসঙ্গে এটি অপরাধ এবং আগ্রাসন বন্ধ করার একটি উপায়ও।’

ইসরায়েল অবশ্য হানিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। তবে ইরানের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ইতোমধ্যেই ইসরায়েল তার সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতার স্তরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, এই সপ্তাহের মধ্যেই ‘উল্লেখযোগ্য আক্রমণের’ প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান বা তার প্রক্সিরা। এছাড়া ইসরায়েলকে রক্ষা করতে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক উপস্থিতিও আরও বাড়িয়েছে দেশটি।

অন্যদিকে লেবাননের শক্তিশালী ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীও বৈরুতে বিমান হামলায় শীর্ষ কমান্ডারদের একজনকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এমন অবস্থায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গাজা যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে মঙ্গলবার তার মধ্যপ্রাচ্য সফরের পরিকল্পনা স্থগিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, এই সপ্তাহেই ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের আক্রমণ করতে পারে ইরান। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, ওই হামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানো নিয়ে কথা বলেছেন।

কিরবি বলেন, ‘সব নেতাই আবার বলেছেন, ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার আছে। আর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ুক, সেটা তারা চান না। নেতারা বলেছেন, তারা এটাও চান না যে, ইরান বা তার সহযোগিরা কোনোরকম আক্রমণ করুক।’

গত সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ইউরোপের চার দেশের নেতাদের একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা ইরানের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন ইসরায়েলকে আক্রমণ না করে। এই ধরনের আক্রমণ হলে আঞ্চলিক সুরক্ষার বিভিন্ন দিকগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।’

এদিকে ইরান আক্রমণ করতে পারে মনে করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি অনেকটাই বাড়িয়েছে আমেরিকা।

রোববার পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনকে দ্রুত পারস্যের খাঁড়িতে পাঠাতে বলেছেন।

এছাড়া মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস জর্জিয়াও সেখানে যাচ্ছে। এই সাবমেরিনের সঙ্গে গাইডেড মিসাইল যুক্ত করা যায়।

অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। শলৎস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিদের মুক্তির ওপর জোর দিয়েছেন।

টিএম