ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় দুই নবজাতক যমজ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই যমজ শিশুর বয়স মাত্র তিন দিন। ঘটনার সময় তাদের বাবা তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে ও জন্মসনদ সংগ্রহ করতে স্থানীয় সরকারি অফিসে ছিলেন।

আর সেই সেময়ই ইসরায়েলি বর্বর হামলায় প্রাণ হারান তারা। নিহত ওই যমজ নবজাতকের একজন ছেলে শিশু ও অন্যজন মেয়ে শিশু। বুধবার (১৪ আগস্ট) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আনাদোলু বলছে, মঙ্গলবার মধ্য গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নবজাতক যমজ শিশু নিহত হয়েছে। ঘটনার সময় তাদের বাবা তাদের জন্মসনদ সংগ্রহ করতে স্থানীয় সরকারি অফিসে গিয়েছিলেন।

গত শনিবার গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে ওই দুই শিশুর জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তাদের অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি বর্বর হামলা নবজাতকদের পরিবারের আনন্দকে কার্যত ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।

নিহত ওই যমজ নবজাতক শিশুর নাম আইসেল এবং অ্যাসের। তাদের বাবা মোহাম্মদ আবু আল-কুমসান আনাদোলুকে বলেন, ‘আমি সবেমাত্র আমার নবজাতক শিশু আইসেল এবং অ্যাসেরের জন্মসনদ পেয়েছি।’

এসময় তার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘তারা গত ১০ আগস্ট জন্মেছিল। আমি বাড়ির বাইরে ছিলাম, কাগজপত্র চূড়ান্ত করছি এবং তারপরে আমি কল পেলাম... আমি আশা করিনি যে- তারা সব হারিয়ে গেছে।’

মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী জুমানা আরাফা ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। নিরলস ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই চ্যালেঞ্জিং সিজারিয়ান ডেলিভারির পরে মাত্র তিনদিন আগেই তারা তাদের যমজ সন্তানকে পৃথিবীতে স্বাগত জানিয়েছিলেন। যমজ শিশুর জন্মের পর তাদের হৃদয় আনন্দে ভরে উঠেছিল এবং এই দম্পতি তাদের দুই ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ সাজাতে চেয়েছিলেন।

সন্তানদের জন্মের তিনদিনের মাথায় জন্মসনদ সংগ্রহ করতে মোহাম্মদ আবু আল-কুমসান মঙ্গলবার স্থানীয় সরকারি অফিসে যান। প্রয়োজনীয় কাজ করার মধ্যেই তিনি একটি ফোন কল পান। আর সেখানেই তাকে জানানো হয়, তার পরিবার যেখানে অবস্থান করছিল সেই অ্যাপার্টমেন্টটিতে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

খবর পেয়েই আল-কুমসান ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত দেইর আল-বালাহের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে ছুটে যান। আর সেখানেই তিনি তার যমজ সন্তানের মৃত্যুর তথ্য পান। মর্গের বাইরে জড়ো হওয়া তার পরিবারকে শোকে ভেঙে পড়তে দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার স্ত্রী এবং তাদের নবজাতক যমজ সন্তানও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।

শোকাহত এই বাবা বলছিলেন, ‘আইসেল এবং অ্যাসের ছিল আমার আনন্দের শুরু এবং শেষ। আমার সুখ অসম্পূর্ণ এবং এখন তা চলে গেছে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯২ হাজারেরও বেশি মানুষ।

টিএম