গাজায় উপত্যকায় শান্তি স্থাপন ইস্যুতে ইসরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নতুন কোনো সংলাপ চায় না উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস; বরং প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত জুনে যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, সেটি বাস্তবায়নের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে গোষ্ঠীটি।

সোমবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “দখলদার বাহিনীর সঙ্গে এখন আলোচনার অর্থ হলো গাজায় তাদেরকে আরও বেশি দিন থাকার সুযোগ দেওয়া। আমরা আর কোনো আলোচনায় যেতে ইচ্ছুক নই। গত ২ জুন জাতিসংঘের সমর্থনে জো বাইডেন যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমরা সেটির বাস্তবায়ন চাই।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার— এই তিন দেশ। সম্প্রতি হামাস এবং ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের জরুরি বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সেই বৈঠকের দিন হিসেবে ১৫ আগস্টকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ৯ আগস্ট এ প্রসঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে হামাস এবং ইসরায়েলের উদ্দেশে তিন দেশের প্রতিনিধিরা বলেন, “যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি ফ্রেমওয়ার্ক গঠিত হয়েছে, তবে এর বিস্তারিত রূপ এবং প্রয়োজনীয় শর্তগুলো এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। চুক্তিটি সম্পূর্ণ করতে হলে দু’পক্ষের আলোচনায় বসা প্রয়োজন।”  

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাৎক্ষণিকভাবে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা সেই বৈঠকে হাজির থাকবে। তবে হামাস তখন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আজকের এই বিবৃতির মা্ধ্যমে এ ইস্যুতে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাল গোষ্ঠীটি।

বাইডেনের যুদ্ধ-বিরতি প্রস্তাব

গত ২ জুন গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বাইডেন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ৩টি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। প্রথম স্তরে গাজায় ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। এই পর্বে রাফাসহ গাজার অন্যান্য জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি কয়েক শ’ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের কব্জায় থাকা কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবে।

সেই সঙ্গে এ ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক। হামাস এবং ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা ও প্রতিরক্ষাবাহিনী এই পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে। যদি এই আলোচনা ৬ সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে শেষ না হয়, তাহলে পরিকল্পনার প্রথম পর্ব বা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়বে।

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস এবং ইসরায়েল— দু’পক্ষের ঐকমত্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার প্রথম স্তর বা পর্যায় এবং তারপর শুরু হবে পরিকল্পনা ২য় পর্ব। এই পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং তার বিনিময়ে গাজার বাসিন্দারা পাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।

পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

এসএমডব্লিউ