বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এখন পর্যন্ত যত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যাটা তার চেয়ে দ্বিগুণ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি নতুন গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনস্টিটিউট অর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) বলছে, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যাটা প্রায় ৬৯ লাখ। কিন্তু সরকারগুলোর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এর অর্ধেক।   

যুক্তরাষ্ট্র সময় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আইএইচএম’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে করোনায় অনেক মৃত্যুর সরকারি রেকর্ড রাখা হয়নি। শুধু যারা হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় ও আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন তাদের মৃত্যুর হিসাব রাখা হয়েছে। 

সরকারি হিসাবকে সূত্র ধরে করোনার পরিসংখ্যান জানানো যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত মহামারি করোনা এক কোটি ৫৫ লাখ মানুষকে সংক্রমিত করেছে। এর মধ্যে অন্তত ৩২ লাখ ৫০ হাজার জন মারা গেছেন। 

আইএইচএমই হলো স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তুলনামূলক সঠিক হিসাবই দিয়ে থাকে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। হোয়াইট হাউস প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্ধৃত করে। জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও এর রিপোর্ট গভীরভাবে অনুসরণ করেন।   

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে যে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারের সঙ্গে একটি দেশে করোনা পরীক্ষার গভীর সংযোগ রয়েছে।

আইএইচএমই’র পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যুরে

রিপোর্টটি প্রকাশ করে আইএইচএমই’র পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘যদি আপনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পরীক্ষা না করেন তাহলে করোনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মৃত্যুর হিসাবটিও আপনি সঠিকভাবে রাখতে পারবেন না।’ 

মহামারির আগে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কারণে গড়ে কত মানুষের মৃত্যু হতো আরও করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর সেই মৃত্যুর সংখ্যাটা কীভাবে বেড়েছে সেগুলোর বিশ্লেষণ ছাড়াও বৈজ্ঞানিক নানা উপায়ে করোনার মোট প্রাণহানির এই হিসাবটি করেছে আইএইচএমই।   

তাদের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৫ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) বুধবার পর্যন্ত দেওয়া হিসাবে মোট প্রাণহানির সংখ্যাটা ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯১ জন। 

প্রিয়জনের মৃত্যুতে আহাজারি যেন দিল্লির স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনায় প্রাণহানি নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি জানতে সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও মার্কিন সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

আর একটি বিষয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনার মৃত্যুর যে হিসাব দিয়েছে, সেখানে শুধু সরাসরি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির হিসাব অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মহামারিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণে যেসব প্রাণহানি হয়েছে তা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। 

আইএইচএমই’র পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যুরে বলেছেন, ‘মহামারিতে প্রাণহানি ঠেকাতে অনেক দেশ জোরালোভাবে কাজ করে গেলেও আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে অতিসংক্রামক ও দ্রুত বিস্তার ছড়ানো ভাইরাসটির প্রকোপ ঠেকানো কতটা কঠিন কাজ।’

এএস