গণবিপ্লবের পর তড়িঘড়ি করে গত সোমবার ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিক অবস্থায় হাসিনার পরিকল্পনা ছিল— প্রথমে ভারতে যাবেন। দেশটিতে অল্প সময় অবস্থান করে উড়াল দেবেন যুক্তরাজ্যে। কারণ তার বোন শেখ রেহানা এবং তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তবে সেটি হয়নি। ফলে এখনো ভারতে রয়ে গেছেন তিনি।

স্বল্প সময়ের জন্য ভারতে গেলেও এখন সেখানে তাকে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হবে এটি অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।

হাসিনার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ‘টেকনিক্যাল’ কারণে সেটি আটকে গেছে। যুক্তরাজ্যের নিয়ম হলো— যদি কেউ আশ্রয় চায় তাহলে তাকে আগে তাদের দেশে আসতে হবে; এরপর আশ্রয়ের আবেদন করতে হবে। তবে হাসিনার কাছে যুক্তরাজ্যের ভিসা না থাকায় তিনি এখন সেখানে যেতে পারছেন না।

এখন প্রশ্ন উঠেছে হাসিনা কী ভারতে আশ্রয় নিতে পারবেন?

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানিয়েছে, হাসিনার বিষয়টি ভারতের ‘আশ্রয়প্রার্থী’ নীতিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। কারণ দেশটিতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো নীতি নেই।

ভারত ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সম্মেলন এবং ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি। এই সম্মেলনে কারা শরণার্থী এবং তারা কী কী অধিকার পাবে সেটি উল্লেখ করা হয়েছিল।

যদিও ভারত জাতিসংঘের ওই সম্মেলনে স্বাক্ষর করেনি তবে তারা ৩০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। যার মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা, বাংলাদেশ থেকে চাকমা এবং শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষজন রয়েছেন। কিন্তু মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ রয়ে গেছে সবসময়।

ভারতে যেসব মানুষ আশ্রয়ের জন্য আসেন তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করে এবং তারা তাদের নিজস্ব ও পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

ভারতের ২০১৯ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এটি আরও কঠিন করে দেয়। ওই আইনে মুসলিম বাদে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের অধিকার দেওয়ার বিধান রাখা হয়।

শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে কী হবে?

যেহেতু শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীর ব্যাপারে ভারতের কোনো সুস্পষ্ট নীতি নেই। এতে করে ভারত সরকার হাসিনার ব্যাপারে অনেকটা নির্ভার থাকতে পারবে। তাকে থাকার অনুমতি দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংকট পরিহার একইসঙ্গে এই অঞ্চলে নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে।

সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস

এমটিআই