ফাইল ছবি

সম্প্রতি নিহত হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)। গত সপ্তাহে ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্ত হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারান তিনি।

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরায়েল জড়িত বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে। যদিও ইসরায়েল এই হামলায় জড়িত থাকা বা না থাকার বিষয়ে কিছুই বলেনি। এছাড়া হানিয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান ও হামাস।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে বুধবার ৫৭ সদস্যের এই সংস্থাটির বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংস্থাটির জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই জঘন্য হামলার জন্য অবৈধ দখলদার শক্তি ইসরায়েলকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করছে ওআইসি’। এছাড়া এই হামলাকে ইরানের সার্বভৌমত্বের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ হিসাবে বর্ণনা করেছে সংস্থাটি।

ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান গাম্বিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু টাঙ্গারা বলেছেন, ইসমাইল হানিয়ার এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড এবং গাজায় চলমান যুদ্ধ এই অঞ্চলকে আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন এবং দেশটির ভূখণ্ডে একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার এমন কাজকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায় না। এই জঘন্য কাজটি শুধুমাত্র বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়াতে কাজ করবে যা সম্ভাব্যভাবে সমগ্র অঞ্চলকে বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

সৌদি উপকূলীয় শহর জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসির এই বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল ইরান ও ফিলিস্তিন। ৫৭ দেশের এই গোষ্ঠীটি নিজেকে মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসাবে বর্ণনা করে থাকে।

এদিকে বৈঠকের আয়োজক সৌদি আরব বলেছে, ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ড ইরানের সার্বভৌমত্বের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-খেরেজি বলেছেন, তার দেশ ‘কোনও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বা কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করাকে প্রত্যাখ্যান করে।

হামাস এবং ইরান গত সপ্তাহে তেহরানে হানিয়ার হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে, তবে ইসরায়েলি সরকার এই ঘটনার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।

হানিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ইসরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তির’ হুমকি দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বুধবার ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ওআইসির বেশ কয়েকজন সদস্য ওয়াশিংটনের সাথে একমত যে– ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এই অঞ্চলে অব্যাহত সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব ওআইসি সভায় একই জিনিস ঘটবে যা আমরা গত সপ্তাহ জুড়ে কার্যকর করার চেষ্টা করেছি এবং যা ইরানের সাথে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত পক্ষ ইরানকে প্রভাবিত করে – একইভাবে আমরা যেভাবে ইসরায়েলের সরকারকে প্রভাবিত করেছিলাম। আর তা হচ্ছে– তারা সংঘর্ষ বাড়ানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।’

তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক উত্তেজনা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনাকে বিপন্ন করতে পারে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকান হন ইসমাইল হানিয়া। এর আগের দিন তিনি ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুজ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে যান। অনুষ্ঠান শেষে তেহরানের একটি গেস্ট হাউজে উঠেন হানিয়া। সেখানেই আগে থেকে রাখা বোমা বিস্ফোরণে এক দেহরক্ষীসহ নিহত হন তিনি।

পরদিন বৃহস্পতিবার তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার প্রথম জানাজা হয়। এতে ইমামতি করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। জানাজা শেষে তার মরদেহ বহনকারী কফিন তেহরানের রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।

তার পরদিন শুক্রবার কাতারের সবচেয়ে বড় মসজিদ ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবে হামাস প্রধানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হানিয়ার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন হামাসের উচ্চপদস্থ নেতারা। পরে হানিয়াকে দোহার উত্তরে অবস্থিত লুসাইলের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে হানিয়ার এই হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও নতুন করে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরান ইতোমধ্যে হুমকি দিয়েছে তারা হানিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে সরাসরি ইসরায়েলে আঘাত হানবে। এমন আশঙ্কা থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে ইসরায়েল।

এছাড়া বিশ্বের অনেক বিমান সংস্থা ইসরায়েলের তেল আবিবে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

টিএম