কখনও ক্লোজ শটে চোখের জল। কখনও মেঠোপথে বাইকে চেপে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেওয়া। কিংবা দুর্ঘটনাস্থলে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকা কোচের তলা থেকে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসা। ট্রেন দুর্ঘটনার থেকেও বেশি চর্চায় ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের এহেন একের পর এক ভাইরাল’ ভিডিও বা ‘রিল। তাই লোকসভায় রেলবাজেট নিয়ে আলোচনা শেষে তার ভাষণের মধ্যেই উঠল স্লোগান, ‘রিলমন্ত্রী...’। 

বৃহস্পতিবার লোকসভায় এমপিরা উঠে দাঁড়িয়ে এহেন কটাক্ষ করতেই চটেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। পরপর ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়েও তার দিকে আঙুল তোলেন বিরোধীরা। বিষয়টি অবশ্য তাকে তেমন বিচলিত করতে পারেনি। 

কিন্তু ‘রিলমন্ত্রী’ কটাক্ষ শোনামাত্র আর সামলাতে পারলেন না। মেজাজ হারিয়ে বিরোধী বেঞ্চের দিকে উদ্ধত ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে সাফাই দিলেন, কেবল রিল বানানো লোক নই আমরা। আমরা পরিশ্রম করার লোক, কাজ করার লোক। আপনাদের মতো রিল বানিয়ে... রিল বানিয়ে দেখানোর মতো লোক নই আমরা। বুঝলে... বসো... হ্যাট!

গত বছর ভারতের বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। গত দু’মাসে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৭ জন। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে অবশ্য এ দিনও নির্দিষ্ট করে কোনও জবাব দেননি অশ্বিনী বৈষ্ণব। বরং ট্রেন দুর্ঘটনা এবং রেলযাত্রী সুরক্ষা নিয়ে একই পরিসংখ্যানের চর্বিতচর্বণ করে গেছেন। এমনকি টেনে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলমন্ত্রিত্বের সময়কেও। 

তিনি বলেন, মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালে দুর্ঘটনা সামান্য কমলেও সংসদে পরিসংখ্যান দেওয়া হতো। তাহলে এখন আপনারা শুনবেন না কেন? কংগ্রেস আমলের তুলনায় মোদি জমানায় ঢের কমেছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। ইউপিএ আমলে বছরে গড়ে ১৭১টি ট্রেন দুর্ঘটনা হতো। তা ৬৮ শতাংশ কমেছে।

রেল পরিকাঠামো এবং যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি না করার আর্জি জানিয়েও কংগ্রেসকেই তুলোধোনা করে গেছেন বৈষ্ণব। প্রশ্ন তুলেছেন, কংগ্রেস আমলে এক কিমি রেল ট্র্যাকেও কেন অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেম কার্যকর করা যায়নি? সঙ্গে ছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, বুলেট ট্রেনের প্রসঙ্গ তুলে মোদিবন্দনা। 

‘কবচ’ প্রযুক্তি সব রুটে কবে থেকে কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে নীরব থাকেন অশ্বিনী। লোকো পাইলটদের প্রদেয় পরিষেবা, সুরক্ষা খাতে খরচ, বা শূন্যপদে নিয়োগ— তার দাবি, কয়েক যোজন এগিয়ে রয়েছে মোদির শাসনামল। এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করে ‘ইনডিয়া’ জোট।

কেএ