কার্বন নির্গমন বন্ধ করার পথে নরওয়ের দ্বীপমালা
বিশ্বের এক প্রান্তে অবস্থিত স্ভালবার্ড দ্বীপমালা শস্যের ভল্টের কারণে পরিচিত। এবার সেখানে ধাপে ধাপে জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি চালু করার উদ্যোগ চলছে। একমাত্র কয়লাখনিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সুমেরু বৃত্তের ওপরে স্ভালবার্ড দ্বীপমালায় মিয়া স্লেটাস বাস করেন। ২৪ বছর বয়সী এই নারীর ঠিকানা নরওয়ের লোংইয়ারবেইয়েন বসতি। তার জন্য যে কাজ দৈনন্দিন জীবনের অংশ, সেটা কিন্তু মোটেই সাধারণ নয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি পার্মাফ্রস্ট এলাকার এমন এক কয়লা খনিতে কাজ করেন, যেখানে গত প্রায় ৫০ বছর ধরে উত্তোলন চলছে।
পাতালে প্রবেশের আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি জরুরি। কয়লা খনির মূল অংশ সাত কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। প্রথমে গাড়ি করে, তারপর ইলেকট্রিক যানে চেপে এবং শেষে পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছতে হয়।
মিয়া একটি সুড়ঙ্গ স্থিতিশীল করছেন। সিলিং-এ ড্রিলিং করে এবং লোহার রড ঢুকিয়ে তিনি পাথরের চাপ সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তার মতে, ‘সব সময়ে প্রথমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। তা না করে এগোনো ঠিক নয়।’
সাত নম্বর মাইন স্ভালবার্ড দ্বীপমালায় নরওয়ের শেষ সক্রিয় খনি। আগামী বছরের গ্রীষ্মে সেটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ বিকল্প জ্বালানির উৎস বেছে নেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে, এই সিদ্ধান্ত তারই অংশ।
মিয়া স্লেটাস বলেন, ‘আমি যখন মাইনে কাজ শুরু করি, তখন ২০৪৫ সাল পর্যন্ত সেটি চালু রাখার পরিকল্পনা ছিল। এক বছর পরেই আমাদের বলা হলো, খনি বন্ধ হচ্ছে। এখনো আমি শান্ত রয়েছি, খুব বেশি চিন্তা না করার চেষ্টা করছি।’
সব খনি শ্রমিক ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে। ২০২৩ সালে সাত নম্বর মাইন বন্ধ করার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সেটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতি বছর সেই খনিতে উৎপাদিত প্রায় ৩০ হাজার টন কয়লা দ্বীপমালার রাজধানী লোংইয়ারবেইয়েনে শীতের সময়ে হিটিং ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। আরও প্রায় ৮০ হাজার টন জার্মানিসহ ইউরোপে ধাতু ও রাসায়নিক শিল্পখাতে কাজে লাগানো হয়।
গত বছরের গ্রীষ্মে লোংইয়ারবেইয়েন কয়লা পরিত্যাগ করে একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ডিজেল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। শহরের মেয়র টেরইয়ে আউনেভিকের মতে, জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পথে এটা প্রথম পর্যায়। কয়লা ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭৫ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। ফলে শহরটি আরও কার্যকর কোনো উৎসের খোঁজ করছিল।
আউনেভিক বলেন, ‘জানি, এক জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে অন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত শুনতে কিছুটা অদ্ভুত লাগবে। কিন্তু প্রথম ধাপ হিসেবে ডিজেল ভালো, কারণ সেটি অনেক বেশি নমনীয়। আমরা স্থিতিশীলতার খাতিরে নতুন এক ব্যাটারি পার্কে বিনিয়োগ করেছি। এর ফলে বায়ু ও সৌরশক্তির মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ধাপে ধাপে চালু করা সহজ হবে।’
স্ভালবার্ডে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি চালু করার দায়িত্ব পালন করছেন রাষ্ট্রীয় স্টিউরে নর্শকে কোম্পানির কর্মী মন্স ওলে সেলেভল্ড। সেই কোম্পানি প্রায় একশো বছর ধরে স্ভালবার্ডে কয়লা উত্তোলন করছে। এখন তারা গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে।
আরও পড়ুন
লোংইয়ারবেইয়েনের বাইরে ইসফেয়ার্ড রাডিও এলাকায় এক সৌর প্যানেল পার্ক প্রকল্প চালু আছে। শহরের মধ্যেও সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পগুলো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বসন্তকাল থেকে স্ভালবার্ডে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো পাওয়া যায়।
মন্সের মতে, এনার্জি ট্রানজিশনের ক্ষেত্রে সৌর প্যানেলগুলো আদর্শ। প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে মন্স ওলে সেলেভল্ড বলেন, ‘আমার পেছনে গত বছরে তৈরি ছয়টির মধ্যে একটি সোলার ফেসিলিটি দেখতে পাচ্ছেন। দি পোলার সেন্টার ভবনের ওপর সেটি রয়েছে। সেই ভবনে হোটেল ও দপ্তর রয়েছে। আমরা প্রায় সব ছাদের ওপর সোলার প্যানেল বসিয়েছি। এটা বাঁকানো ছাদ। দেখতে বেশ ভালো বলতে হয়।’
বায়ু ও সৌরশক্তির পাশাপাশি স্ভালবার্ডে জিওথার্মাল এনার্জি ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
টিএম