শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে

নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জের পুরোপুরি কেটে যাওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা; আর এর মধ্যেই বড় ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহেও প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে যে রাজনৈতিক দলের সমর্থনের ওপর ভর দিয়ে ক্ষমতায় রয়েছেন বিক্রমাসিংহে, সেই শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) আসন্ন নির্বাচনে তাকে সমর্থন দিতে অস্বীকার করেছে।

এসএলপিপির মহাসচিব সালাগা কারিয়াওয়াসাম সোমবার দলের সর্বোচ্চ ফোরাম পলিটব্যুরো কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, “পলিটব্যুরো কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আসন্ন নির্বাচনে এসএলপিপি নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করাবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।”

সালাগা কারিয়াওয়াসাম দলের অবস্থান স্পষ্ট করার পর এ ইস্যুতে রনিল বিক্রমাসিংহের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিকরা, তবে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

প্রসঙ্গত, এসএলপিপি শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং এই দলের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছে রাজাপাকশে পরিবার। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে এবং তার বড়ভাই ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকশে এই দলের শীর্ষ দুই নেতা। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে এসএলপিপি। সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট হন গোতাবায়া, মাহিন্দা হন প্রধামন্ত্রী।

কিন্তু তার বছর শুরু হয় করোনা মহামারি। সেই মহামারিকালীন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিতে চরম ব্যর্থতা, সরকারি তহবিল থেকে বেহিসেবি অর্থব্যয় এবং সরকারের ভুল নেতৃত্বের ফলে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকে যায়। এতে ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ আমদানির মতো অর্থও ছিলো না দেশটির।

এই অবস্থায় এক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের চরম বিক্ষোভের মুখে ২০২২ সালের জুলাই মাসে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া। তিনি দেশত্যাগের পর পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতাদের ভোটে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল এবং গোতাবায়া সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদের বাকি ২ বছর পূর্ণ করেন। তার গত দুই বছরের নেতৃত্ব ইতোমধ্যে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি।

বিক্রমাসিংহের নিজের রাজনৈতিক দলের নাম ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) এই দলটি ছোটো এবং শ্রীলঙ্কায় তেমন জনপ্রিয় নয়। বর্তমান পার্লামেন্টে এই দলের একজনমাত্র এমপি রয়েছেন, তিনি রনিল।

তবে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এসএলপিপি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও সামনের নির্বাচনে জয়ের আশা রয়েছে রনিল বিক্রমাসিংহের। দেশটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জয়দেভা উইয়ানগোড়া এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, “বর্তমানে দেশ যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে আসলে এই মুহূর্তে বলার উপায় নেই যে আগামী নির্বাচনে কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি। ভোটের ফলাফল থেকেই তা জানা যাবে। শ্রীলঙ্কার জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য নীরবে অপেক্ষা করছেন।”

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ