বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে ভূস্বর্গ খ্যাত ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরেও। সেখানকার তাপমাত্রার পারদ চড়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। প্রায় দীর্ঘ ২৫ বছর পর সেখানে এমন গরম পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে কাশ্মিরের মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সাধারণত গরমের সময়ও কাশ্মিরকে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি ওঠে না। ফলে সেখানে এসি দূরস্থান, ফ্যানেরও দরকার হয় না। কিন্তু সেই কাশ্মিরেই তাপমাত্রা এতটা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষ।

ইতিমধ্যে উদ্যানপালন বিভাগ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এতে কাশ্মিরের আপেল, আখরোটসহ বিভিন্ন বাগানের মালিক ও কর্মীদের এই গরমে বাগান বাঁচানোর জন্য  কী কী ব্যবস্থা নিতে সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে, যদি পানি দেওয়ার সুবিধা থাকে, তাহলে অবিলম্বে যেন বাগানে পানি দেওয়া হয়। গাছের গোড়ায় আর্দ্রতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কাশ্মিরের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে কিছু পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর আর বৃষ্টিপাত হয়নি। সে জন্য গাছে পানি দেওয়া দরকার। একটা আপেলের ৮৬ শতাংশই পানি। তাই গাছ পানি না পেলে আপেল ভালো হবে না। এখন পানি না পেলে আপেল উৎপাদন কম হবে। ড্রাই ফ্রুটের ক্ষেত্রেও পোকা লেগে যাবে।

কাশ্মিরে এখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। তাপপ্রবাহের ফলে ঝিলম নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ধানের ক্ষেত, সবজির ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। কাশ্মিরের আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ চলছে। আগামী দিনে অল্পস্বল্প বৃষ্টি হতে পারে। আগস্ট পর্যন্ত সামান্য স্বস্তি হতে পারে। কিন্তু ভারী কিংবা লাগাতার বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা এখনই নেই।

বর্তমানে কাশ্মিরের স্কুলে গরমের ছুটি দেওয়ার দাবি উঠেছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী দু’দিন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। এছাড়া বাকি বাচ্চাদের স্কুল শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত।

এই নির্দেশ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। বাচ্চারা এত তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে পারবে কি না, সকালে ঘুম থেকে উঠলে তাদের শরীর খারাপ হবে কি না সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। সাধারণত কাশ্মিরে শীতের সময় স্কুলে দীর্ঘ ছুটি থাকে। তার ওপর গরমের ছুটি দিতে হলে বাচ্চারা কতদিন স্কুল করতে পারবে, সেই প্রশ্নও করছেন অনেকে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দুপুরের কড়া রোদে বাচ্চা ও বয়স্কদের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রচুর পানি পানের পরামর্শও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

• কেন এই তাপপ্রবাহ?

শ্রীনগরের আবহাওয়া অফিসের প্রধান সোনাম লোটাস বলেন, 'যখন দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি না হয়, তখন এরকম অবস্থা হয়। তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং তা সহজে কমে না। এই তাপপ্রবাহ এবার কাশ্মিরে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন চলবে। তারপর হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শের-ই কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসনিম মুবারক ডাউন টু আর্থকে বলেন, এই তাপপ্রবাহ বুঝিয়ে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী রকমভাবে পড়ছে। এই তাপপ্রবাহের প্রভাব আপেলের আকার ও রংয়ের ওপর পড়বে।

এসএস