প্রবল বর্ষণ এবং তার জেরে নদী-নালা-জলাশয়ের পানি বৃদ্ধি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে ব্যাপক বন্যার কবলে পড়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ইতোমধ্যে এই দুর্যোগ সামাল দিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র রোদং সিনমুন সোমবার এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সিনুইজু শহর এবং উইজু জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৪ হাজার ২শ’রও বেশি মানুষ, ভেসে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসল।

সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ও বিমানে করে উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রোদং সিনমুন। সেনাবাহিনীর ১০টিরও বেশি হেলিকপ্টার এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে বন্যার ছবিও প্রকাশ করেছে রোদং সিনমুন। সেসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার পানি ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ির বহর। সেই বহরে সবার আগের কালো রঙের একটি লেক্সাস গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে মুখ বের করে বন্যা দেখছেন কিম জং উন। এছাড়া হেলিকপ্টারের ওপর থেকে তোলা ছবিতে বন্যায় ডুবে যাওয়া জনপদের ছবিও ছেপেছে উত্তর কোরিয়ার এই সরকারি সংবাদপত্র।

বন্যায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা জানায়নি রোদং সিনমুন। এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে যে সব অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে, সেসবের মধ্যে চীনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলও রয়েছে।

সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে যে খাদ্য সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া, তাকে আরও তীব্র করবে এই বন্যা।

এদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সংস্থঅ এস. রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গর্ডন ক্যাং বিবিসিকে বলেছেন, বন্যা উত্তর কোরিয়ায় কোনো বিরল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, তবে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে কিম জং উন সরেজমিনে গিয়েছেন— এই ব্যাপারটি বেশ বিরল। কারণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা সাধারণত প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি বিরূপ মন্তব্যের জন্যেই সংবাদের শিরোনাম হন। এর বাইরে অন্য কোনো ইস্যু বা কারণে তাকে সংবাদ শিরোনামে তেমন দেখা যায় না।

বিবিসিকে গর্ডন ক্যাং বলেন,“আমার ধারণা, বন্যার পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন— এমন ছবি প্রকাশের মাধ্যমে কিম জং উন আসলে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চাইছেন যে, বন্যার্ত মানুষকে সহায়তা প্রদানের মতো সক্ষমতা তার রাষ্ট্র রাখে।”

প্রসঙ্গত, উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। যদিও বাইরের জগতে দেশের প্রায় কোনো তথ্যই প্রকাশ করে না কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন সরকার, তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ২০১৫ সালে প্রকাশিত নথি সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জনগণের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৭০০ ডলার।

“তবে আগের তুলনায় এখন সম্ভবত খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে উত্তর কোরিয়া। এর প্রধান কারণ চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সাম্প্রতিক বন্ধুত্ব,” বিবিসিকে বলেন ক্যাং।

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ