যুক্তরাষ্ট্রকে স্নায়ুযুদ্ধের ধাঁচের সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জার্মানিতে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এমনকি প্রয়োজনে রাশিয়া মধ্যবর্তী-পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন পুনরায় শুরু করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রোববার (২৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, তেমন কিছু হলে রাশিয়া সেক্ষেত্রে মধ্য-পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন পুনরায় শুরু করবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে আঘাত হানার মতো দূরত্বের মধ্যে একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করবে।

যুক্তরাষ্ট্র এর আগে গত ১০ জুলাই বলেছিল, তারা দীর্ঘমেয়াদী সামরিকীকরণের অংশ হিসাবে ২০২৬ সাল থেকে জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন শুরু করবে। যার মধ্যে এসএম-৬, টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাইপারসনিক অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ান নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে রাশিয়া, চীন, আলজেরিয়া এবং ভারতের নাবিকদের কাছে দেওয়া এক বক্তৃতায় পুতিন রোববার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধ-ধাঁচের ক্ষেপণাস্ত্র সংকট শুরু করার ঝুঁকি নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ডে এই জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে উড়ার সময় - যা ভবিষ্যতে পারমাণবিক ওয়ারহেড দিয়ে সজ্জিত হতে পারে - প্রায় ১০ মিনিট হবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের ক্রিয়াকলাপ বিবেচনা করে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার মতো অনুরূপ ব্যবস্থা নেব।’

এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৫০০ থেকে ৫৫০০ কিলোমিটার (৩১০-৩৪২০ মাইল) মধ্যে যেতে পারে। ১৯৮৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু ওয়াশিংটন এবং মস্কো উভয়ই পরে সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। আর ২০১৯ সালে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য দুটি দেশই একে অপরকে অভিযুক্ত করে।

পুতিন ২০২২ সালে রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠিয়ে আগ্রাসন শুরু করেন। তিনি এই যুদ্ধকে পশ্চিমের সাথে পূর্বের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়াকে অপমানিত করা হয়েছে।

ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা বলছে, (যুদ্ধের নামে) পুতিন সাম্রাজ্যিক ধাঁচে ভূখণ্ড দখলে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বর্তমানে ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া।

রাশিয়া বলেছে, একসময় রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ থাকা এসব ভূখণ্ড এখন আবার রাশিয়ার অংশ হয়েছে এবং এগুলো আর কখনোই ফেরত দেওয়া হবে না।

টিএম