মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তার অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করছে থাইল্যান্ডের সরকার। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডের কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে অস্ত্র আমদানির অর্থ পরিশোধ করে মিয়ানমারের সরকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক তদন্তে জানা গেছে, জান্তা ক্ষমতা দখলের পর গত তিন বছরে মিয়ানমারে অস্ত্র রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর তহবিল রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত তিন বছরে মিয়ানমারের সামরিক সরকার যত অস্ত্র আমদানি করেছে এবং করছে, তার সবই ব্যবহার করা হচ্ছে দেশটির বেসামরিক জনগণ এবং বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দমনের কাজে। আর অস্ত্র আমদানি সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন জান্তাকে সহযোগিতা করছে থাইল্যান্ডের কিছু ব্যাংক।

গতকাল বুধবার রাজধানী ব্যাংককে সব থাই বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে দেশটির সরকারের। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অব থাইল্যান্ড এবং অর্থ পাচার রোধে গঠিত থাই সরকারি সংস্থা অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অফিসের (এএমএলও) প্রতিনিধিরা সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে।

সেখানেই টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন থাই কর্মকর্তারা। এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই টাস্কফোর্সের মূল কাজ হবে— থাই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতিটি আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখা। মূলত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়েই গঠন করা হচ্ছে এই টাস্কফোর্স।

২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামারিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন, বর্তমানে দেশটিতে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধানও তিনি।

অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি জনগণ। প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সেই বিক্ষোভ নির্মমভাবে দমনের চেষ্টা করেছে জান্তা, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং ২০২২ সাল থেকে কার্যত দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের একটি পক্ষ সামরিক সরকার এবং অপরপক্ষ বা প্রতিপক্ষ মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ ও জান্তাবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষঠীগুলো।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের কার্যালয় সম্প্রতি জান্তার অস্ত্র আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২২-’২৩ অর্থ বছরে মোট ১২ কোটি ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তার আগের অর্থ বছরে সামরিক বাহিনী আমদানি করেছিল ৬ কোটি ডলারের অস্ত্র। অর্থাৎ এক বছরে অস্ত্র আমদানি বাবদ অর্থব্যায়ের পরিমাণ দ্বিগুণ করেছে জান্তা।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ