নিজের যোগ্যতায় পেয়েছিলেন চাকরি। কিন্তু কর্মজীবনে গিয়েও মেলেনি শান্তি। সহকর্মীদের কাছ থেকে নিত্যদিনই কটাক্ষের শিকার হতে হয় তাকে। কখনও চেহারা নিয়ে, কখনও আবার কথা বলা বা খাবার খাওয়ার ধরণ নিয়ে।

দিনে দিনে সহকর্মীদের হাসির পাত্র হয়ে উঠেছিলেন ২৭ বছর বয়সী ওই নারী। শেষমেশ আর সহ্য করতে না পেরে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি। অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই আত্মহত্যা করলেন ব্যাংকে কর্মরত ওই নারী।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে। বুধবার (১৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের কর্মস্থলে ছয় মাস ধরে তীব্র কটাক্ষ, শরীর নিয়ে কটূক্তি এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করার পর উত্তরপ্রদেশের একটি ব্যাংকে কর্মরত ২৭ বছর বয়সী এক নারী তার বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন।

মৃত ওই নারী ব্যাংকারের নাম শিবানী ত্যাগী। তিনি ভারতের অ্যাক্সিস ব্যাংকের নয়ডা-ভিত্তিক শাখায় রিলেশনশিপ ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার গাজিয়াবাদের বাড়িতে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ২৭ বছরের ওই নারী ভারতের বেসরকারি ব্যাংক অ্যাক্সিস ব্যাংকে কাজ করতেন। নয়ডায় পোস্টিং হওয়ার পর থেকেই চরম কটাক্ষের শিকার হতে শুরু করেন তিনি। বিগত ছয় মাস ধরে তাকে নিয়ে সহকর্মীরা ঠাট্টা-মজা করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিবানী ত্যাগীর পোশাক নিয়ে কটূক্তির পাশাপাশি কথা বলার ধরন নিয়েও কটাক্ষ করা হতো। বিভিন্ন নাম ধরেও ডাকা হতো। এমনকি চেহারার গড়ন নিয়েও তাকে বানানো হয়েছিল হাসির পাত্র। দিনের পর দিন এই অপমান সহ্য করতে না পেরেই ওই নারী গত শুক্রবার আত্মহত্যা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যার পর শিবানী ত্যাগীর ঘর থেকে একটি সুইসাইড লেটার উদ্ধার করা হয়েছে। চিঠিতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। তাদের যেন মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়, এমন দাবিও জানিয়ে গেছেন শিবানী।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী এই নারী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রথমে শিবানী কিছুই জানাননি তাদের। কিন্তু একপর্যায়ে মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের সব কিছু জানান তিনি। এমনকি চাকরি থেকে একাধিকবার ইস্তফা দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

কিন্তু প্রতিবারই ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার ইস্তফা খারিজ করে দেওয়া হয়। শিবানীর ভাই গৌরব ত্যাগী জানান, সম্প্রতি এক নারী সহকর্মী তার বোনকে আক্রমণ করে। তখন শিবানী ওই নারীকে পাল্টা আঘাত করেন। এরপরই ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাকে টার্মিনেশন লেটার দেওয়া হয়। আর এই অপমান সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেন ওই নারী।

সহকর্মীদের কটাক্ষ-কটূক্তির বিরুদ্ধে শিবানী অনেকবার অভিযোগ করলেও কেউ সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

টিএম