সরকারের সাথে সংলাপে বসার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে কেনিয়ায় সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আবারও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত ও আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।

দেশটির রাজধানী নাইরোবিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে দেশটির পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এ সময় রাজধানীর দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত মাসে দেশটির সরকার কর বৃদ্ধির নতুন একটি বিল পাসের পর কেনিয়াজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় শেষ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট বিতর্কিত সেই বিল প্রত্যাহার করে নেন।

বিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও দেশটির নাগরিকরা সাম্প্রতিক সহিংসতায় কয়েকজনের প্রাণহানি, অপশাসন, দুর্নীতি ও পুলিশের জবাবদিহিতা না থাকায় উইলিয়াম রুটো নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আবারও বিক্ষোভ করছেন। তবে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট রুটো সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া তার সরকারের পুরো মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করেছেন তিনি। দেশটির পুলিশের প্রধানও পদত্যাগ করেছেন।

কেনিয়ায় যে প্রতিবাদ আন্দোলন হচ্ছে তা মূলত দেশটির তরুণরা অনলাইনে সংগঠিত হয়ে চালিয়ে আসছেন। এই বিক্ষোভকারীদের অনেকে সরকারের সাথে সংলাপে বসার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

মঙ্গলবার নাইরোবির দক্ষিণের কিটেনজেলা এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এক বিক্ষোভকারী নিহত হন। পরে তার মরদেহ নিয়ে থানার কাছে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। তবে দেশটির পুলিশ ওই ব্যক্তির প্রাণহানির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

সেসময় বিক্ষোভকারীদের ‘‘রুটোর বিদায় চাই’’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিবিসির একজন প্রতিনিধি বলেছেন, থানায় বিক্ষোভের সময় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় পাথর নিক্ষেপ করেন তারা। মোম্বাসা, কিসুমু, নাকুরু এবং নায়েরিসহ দেশের অন্যান্য অংশেও বিক্ষোভ-সহিংসতা দেখা গেছে।

কেনিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল কেটুয়েন্টিফোরের একজন প্রতিবেদকও নাকুরুতে বিক্ষোভের ঘটনার তথ্য সংগ্রহের সময় বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। তার উরুতে গুলি লেগেছে এবং তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেনিয়ার সংবাদপত্র ডেইলি নেশন বলেছে, দেশটির ৪৭টি কাউন্টির প্রায় অর্ধেকে বিক্ষোভ চলছে।

গত ২৫ জুন বিক্ষোভকারীরা নাইরোবিতে সংসদ ভবনে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ও এর কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর প্রেসিডেন্ট রুটো বিতর্কিত কর বৃদ্ধির বিল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। 

বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত এক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত একটি অধিকার সংস্থা বলেছে, বিক্ষোভ-সহিংসতায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত ও ৪১৩ জন আহত হয়েছেন। 

এসএস