ট্রাম্পকে গুলি: ‘সাজানো নাটক’ বলছেন ষড়যন্ত্রবাদীরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী এক সমাবেশে গুপ্তহত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন দেশটির সাব্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তৃতীয় বারের মতো রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার কয়েক দিন আগে শনিবার পেনসিলভানিয়ার বাটলারে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
বাটলারের সমাবেশস্থলের কাছের একটি ভবনের ছাদ থেকে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে ২০ বছর বয়সী এক তরুণ গুলি চালান। সমাবেশস্থল থেকে ২০০ মিটার দূর থেকে ছোড়া সেই তরুণের একটি গুলি সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ডান কান ফুটো করে বেরিয়ে গেছে। এই হামলার ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করেছেন দেশটির আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তারা। ওই হামলার কয়েক মিনিটের মধ্যে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মঞ্চস্থ’ শব্দটি ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনেক ব্যবহারকারী ট্রাম্পের ওপর তরুণের গুলির ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ বলেও অভিহিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
‘মঞ্চস্থ’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে চরম ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমার্থক হয়ে উঠেছে। দেশটিতে প্রায়ই আক্রমণ বা গুলির ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
— É (@cyberfrontier) July 13, 2024
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইন্টারনেটের অন্যান্য জনপ্রিয় সব বিষয়কে ছাড়িয়ে গেছে মঞ্চস্থ শব্দটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই শব্দটি ব্যবহার করে অসংখ্য পোস্ট করা হয়েছে; যা লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন। তবে এসব পোস্টের বেশিরভাগই অসমর্থিত গুজব, বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা ও গালাগালিতে ভরা।
অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের হত্যা প্রচেষ্টাতেও বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানোর নজির রয়েছে। এর সবচেয়ে সুপরিচিত উদাহরণ ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে জন এফ কেনেডিকে হত্যার ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রে সেসময়ও এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে ভিত্তিহীন গুজব বেড়েছিল।
এক্সে ট্রেন্ডে পরিণত হওয়া ‘মঞ্চস্থ’ শব্দটি কেবল প্রতিশ্রুতিশীল রাজনৈতিক সমর্থক গোষ্ঠীর মাঝেই সীমিত ছিল না। বরং অন্যান্য ব্যবহারকারীদের টাইমলাইনেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুপারিশ করা হয়েছিল; কারণ বাটলারে আসলে কী ঘটেছে তা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তারা। এছাড়া ব্লু টিকধারী এক্স ব্যবহারকারীরা এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে বেশি পোস্ট করায় তা আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে মুহূর্তের মধ্যে ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে শব্দটি।
বরাবরের মতো এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বৈধ প্রশ্ন ও বিভ্রান্তির মাধ্যমে শুরু হয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তা ব্যর্থতাকে দায়ী করে এই ধরনের হামলার ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আবার অনেকে প্রশ্ন করেছেন, হামলাকারী কীভাবে ছাদে উঠলেন? কেন তাকে থামানো হল না? এসব প্রশ্ন হামলার ঘটনায় অবিশ্বাস, জল্পনা এবং বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। এক্সে এক মিলিয়নেরও বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‘এটা একেবারে সাজানো।’’ এতে আরও বলা হয়, ‘‘ভিড়ের মাঝে কেউ দৌড়াচ্ছেন না কিংবা কাউকে আতঙ্কিতও দেখাচ্ছে না। ব্যাপক ভিড়ের মাঝে কেউ প্রকৃত বন্দুকের শব্দ শুনতে পায়নি। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি তাকে (ট্রাম্প) বিশ্বাস করি না।’’
যে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্টটি করা হয়েছে, তিনি আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দা। তার ওই পোস্টের নিচে এক্সের পক্ষ থেকে একটি ট্যাগ জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাটলারের গুলির ঘটনাটি সত্য। সমাবেশের ভেতর ও বাইরের অন্যান্য ফুটেজে সেখানে উপস্থিত লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ও ভয়— উভয়ই পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
হামলার ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ছবি ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ওয়াশিংটনে নিযুক্ত প্রধান আলোকচিত্রী ইভান ভুকির তোলা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত একটি ছবিতে হামলার ঘটনা পরিষ্কার হয়। ছবিতে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে আছেন। এ সময় তার মুখ ও কানে রক্তের দাগ এবং মঞ্চের পেছনে মার্কিন পতাকা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিকেএকটি ইউটিউব চ্যানেলে বলা হয়, ‘‘ছবিটি অত্যন্ত নিখুঁত। পতাকাটিও সবকিছুর অবস্থানকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরছে।’’ এক্সে দেওয়া ইউটিউব চ্যানেলটির পোস্টও ১০ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই পোস্টটি এক্স থেকে মুছে ফেলেন ব্যবহারকারী। ভিন্ন এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আপনি যদি ভুল করেন, তাহলে নিজেকে সংশোধন করে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘সহানুভূতি পাওয়ার জন্য নাটকের মঞ্চায়ন? আপনি কিছুতেই এসব লোকজনকে বিশ্বাস করতে পারেন না, পারেন না। আমি তার জন্য প্রার্থনা করছি না।’’
এসব পোস্টের বেশিরভাগই করেছেন দেশটির বামঘেঁষা ব্যবহারকারীরা; যারা নিয়মিতভাবে ট্রাম্প-বিরোধী মতামত প্রকাশ করে থাকেন। হামলার ঘটনার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের লাখ লাখ অনুসারী তৈরি হয়েছে। যে কারণে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনাকে সাজানো নাটক হিসেবে দাবি করে করা পোস্টগুলোকে মিথ্যা বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এসএস