পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবিকে অবৈধ বিয়ের মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শনিবার বহুল আলোচিত অবৈধ বিয়ের এই মামলা থেকে খালাস পেলেও কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন না তিনি। কারণ কর্তৃপক্ষ অন্য দুটি মামলায় তার বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশটির সংসদের আসনে আরও জয় পাওয়ার একদিন পর ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ওই রায় এসেছে।

আগের স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর ইদ্দত পালন না করে ইমরান খানকে বুশরা বিবির বিয়ের মাধ্যমে ইসলামি বিবাহ আইনের লঙ্ঘন হয়েছে অভিযোগ করে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। পরে সেই সময় এই দম্পতিকে সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন আদালত। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন তারা।

ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আপিলের আদেশের একটি কপি দেখেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে দেখা যায়, ইদ্দত মামলায় ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির সাজার বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল গ্রহণ করে তাদের খালাস দিয়ে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

‌‌রয়টার্স বলছে, অন্য কোনও মামলায় আটক রাখার প্রয়োজন না হলে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারে এই দম্পতির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এর ফলে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানকে কারাগারে আটকে রাখার মতো আর কোনও মামলা অবশিষ্ট নেই।

ইমরান খানের পিটিআই বলেছে, গত বছরের মে মাসে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে গ্রেপ্তারের পর সামরিক বাহিনীর ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় সহিংস হামলা চালায় পিটিআই কর্মীরা। সহিংস এই ঘটনার সাথে যুক্ত অন্য তিনটি মামলায় শনিবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

গত বছরের ৯ মের সহিংসতার ঘটনায় ইমরান খান ও তার হাজার হাজার সমর্থকের বিরুদ্ধে দায়ের করা এক মামলায় গত সপ্তাহে জামিন বাতিল করেছেন ইসলামাবাদের একটি সন্ত্রাসবিরোধী আদালত। তবে ইমরান খানের কারাগারে বন্দিদশা দীর্ঘায়িত করতেই জামিন বাতিলের এই আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই।

আর বুশরা বিবি ভূমি দুর্নীতির এক মামলায় জামিনে রয়েছেন। দুর্নীতির এই মামলায় ইমরান খানের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাকে। সর্বশেষ অবৈধ বিয়ের মামলায় খালাস পাওয়ায় বুশরা বিবিও এখন মুক্ত ব্যক্তি বলে জানিয়েছে পিটিআই।

ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে চার মামলায় কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছিল; এখন তার সবগুলোই বাতিল অথবা স্থগিত করা হয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে কারাবন্দি ইমরান খানকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় গত মাসে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া দুর্নীতির অন্য দুই মামলার সাজাও স্থগিত করা হয়েছে তার।

আদালতের শনিবারের আদেশের পরও ইমরান খানকে কারাগারে আটকে রাখা হলে তা পাকিস্তানে গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে পিটিআই। ২০২২ সালের আগস্টে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে ২৪ কোটি মানুষের এই দেশটি।

ইমরান খান তার ক্ষমতাচ্যুতির পেছনের মূলহোতা হিসেবে দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের দায়ী করেছেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রী তাদের ক্ষমতার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।

সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।

এসএস