বনের পশুপাখি রক্ষার জন্য বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই কোনো না কোনো পরিকল্পনা করে থাকে। তৈরি করা হয় জাতীয় উদ্যান। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী বাঁচানোই মূল লক্ষ্য। কিন্তু সেখানেই উল্টো পথে হাঁটছে আমেরিকা ও কেনিয়া। তারা এবার লাখ লাখ পাখিনিধনের পরিকল্পনা করেছে। কেন হঠাৎ এই উদ্যোগ নিলো তারা?

জানা গিয়েছে, আমেরিকা মারবে প্যাঁচা আর কেনিয়ার নজরে ভারতীয় কাক। কয়েক মাসের মধ্যে লাখ লাখ কাক এবং প্যাঁচা মারার পরিকল্পনা করেছে আমেরিকা এবং কেনিয়া।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। দেশটির মানুষের একটা বড় অংশের জীবিকা পর্যটনকে কেন্দ্র করে। তাই পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নানান পদক্ষেপ করে কেনিয়া সরকার। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই ভারতীয় কাক মারার পরিকল্পনা করেছে তারা।

আগামী ছয় মাসের মধ্যে ১০ লাখ ভারতীয় কাক মারবে কেনিয়া সরকার। সেজন্য বিশেষ পন্থা অবলম্বন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

কেন কাকনিধনের পরিকল্পনা করা হয়েছে? কেনিয়া থেকে ভারতের দূরত্ব অনেকটাই। সেখানে কীভাবে ভারতীয় কাক গেল? ভারত থেকে উড়ে কেনিয়া যায়নি কোনো কাকই। ভারতের মতো কেনিয়াও ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ। তাই ভারত এবং কেনিয়ার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে জাহাজ আসা-যাওয়া করত। সেই জাহাজে চেপেই ভারত থেকে কাক গিয়ে পৌঁছায় কেনিয়ায়।

কেনিয়ার উপকূলবর্তী এলাকায় মূলত এসব কাক বাস শুরু করে। সেখানেই বংশবিস্তার করে। এখন কেনিয়ায় লাখ লাখ ভারতীয় কাক রয়েছে। সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে তারা।

সেই কাকই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেনিয়া সরকারের। উপকূলবর্তী এলাকায় যেসব ছোট ছোট পাখি থাকে, তাদের ওপর হামলা করে কাকগুলো। ছোট ছোট পাখিদের খাদ্যবস্তুতে পরিণত করে তারা।

শুধু তা-ই নয়, সমুদ্র উপকূলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নানাভাবে বিরক্ত করে কাকগুলো। তাই ভারতীয় কাক মেরে ফেলতে চাইছে কেনিয়া সরকার।

কাক মারতে বিষ প্রয়োগ করবে কেনিয়া প্রশাসন। বিভিন্ন হোটেল বা খাবারের দোকানে স্টারলাইসাইড নামক একটি বিষ সরবরাহ করা হবে। সেই বিষ মাংস বা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে কাককে দিলে তা খাওয়া মাত্রই মরে যাবে।

এ তো গেল কেনিয়ার কথা। এবার আসা যাক আমেরিকার কথায়। সেখানেও পাখি মারার পথে হাঁটতে চলেছে সরকার। আমেরিকা মারবে প্যাঁচা। একটি বিশেষ প্রজাতির প্যাঁচা ধ্বংস করতে চায় জো বাইডেন প্রশাসন।

জানা গিয়েছে, সাড়ে চার লাখ বড় প্যাঁচা মারবে সরকার। সে জন্য শিকারিদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। ওই জাতের প্যাঁচা দেখা মাত্র গুলি করে মারার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আমেরিকায় সাধারণত দুই ধরনের প্যাঁচা দেখা যায়। একটি প্যাঁচা দেখতে যাদের গায়ে ছোট ছোট দাগ থাকে। আকারে এই প্যাঁচা ছোট হয়। বড় প্যাঁচা ছোট প্যাঁচাগুলোকে মেরে ফেলে। অনেক সময় প্রতিহিংসার বশেই ছোট প্যাঁচাগুলোকে মারে বড় প্যাঁচা।

এই কারণেই এখন আমেরিকায় ছোট প্যাঁচা বিলুপ্তপ্রায়। বড় প্যাঁচার হাত থেকে ছোট প্যাঁচাগুলোকে উদ্ধার করতে শিকারিদের নিয়োগ করেছে প্রশাসন। 

অন্যদিকে প্যাঁচা বাঁচাতে প্যাঁচা মারার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো। তবে তাদের আপত্তি ধোপে টেকেনি। আমেরিকা হোক বা কেনিয়া, লাখ লাখ পাখি মারতে উদ্যোগী সরকার।

এমএ