সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতা ও অর্থায়নের দায়ে ৪৩ জনকে আজীবন কারাবাস এবং ১০ জনকে ১০ থেকে ১৫ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছেন আমিরাতের উচ্চ আদালত। বুধবার রাজধানী আবুধাবির ফেডারেল আপিল আদালত এই রায় ঘোষণা করেছেন। সাজাপ্রাপ্তদের সবাই আমিরাতের নাগরিক।

২০১৩ সালে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আমিরাতের বিভিন্ন এমিরেত (রাজ্য) থেকে শতাধিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ৯৪ জনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।

নিম্ন আদালতের বিচারে এই ৯৪ জনই দোষী সাব্যস্ত হন। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবাসের সাজাও দেন আদালত।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮৪ জন নিম্ন আদালতের রায় বাতিল চেয়ে আবুধাবির ফেডারেল আপিল আদালতে আপিল করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৫৩ জন আবেদনকারীর রায় গতকাল বুধবার ঘোষণা করেছেন ফেডারেল আপিল কোর্ট। বাকি ৩১ জনের রায় পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

আমিরাতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ওয়াম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, সাজাপ্রাপ্তদের সবার বিরুদ্ধে মিসরভিত্তিক কট্টরপন্থি ইসলামী গোষ্ঠী মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। আমিরাতে এই গোষ্ঠীটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নথিভুক্ত।

গত ডিসেম্বরে ফেডারেল আপিল আদালতে বিচার শুরু হয়েছিল এই সাজাপ্রাপ্তদের।

২০১৩ সালে নিম্ন আদালতে যখন এই ব্যক্তিদের বিচার শুরু হয়, তখন থেকেই আমিরাতে ক্ষমতাসীন অভিজাতশ্রেনীর সমালোচনা ও তাদের নিন্দা জানিয়ে আসছেন দেশি, বিদেশি এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশষজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ— ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে আমিরাতের সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) আমিরাত শাখার গবেষক জোয়ে শিয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এই রায়কে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমিরাতের সুশীল সমাজের একটি বড় আঘাত এলো।’

আমিরাতের বিখ্যাত মানবাধিকারকর্মী আহমেদ মনসুরও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের তালিকায় রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসবের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জাতিসংঘের মানবাধিকার ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত বেন সাউল তাৎক্ষনিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই বিচারিপ্রক্রিয়া এবং রায়— উভয়ই গভীরভাবে দমনমূলক এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনের ভয়াবহ অপব্যবহারের নজির।’

তবে আমিরাতের বিচার মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলেছে, সাজাপ্রাপ্তদের সবার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে সংশ্লিষ্টতা ও অর্থায়ন সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল এবং দেশে প্রচলিত আইনের ভিত্তিতে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্তদের শাস্তি মওকুফের সুযোগ অবশ্য এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ফেডারেল আপিল আদালতের রায় বাতিল চেয়ে তারা আমিরাতের সর্বোচ্চ আদালত ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ