দুইদিনের সফরে রাশিয়ায় গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (৮ জুলাই) রাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার নৈশভোজ ছিল।

সেখানে রুশ সেনাবাহিনী থেকে ভারতীয়দের ছাড়তে অনুরোধ করেন মোদি। জবাবে, সেখানেই এই ইস্যুতে পুতিন সম্মতি দেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধেও মোদি আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাশিয়ায় দুই দিনের সরকারি সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য সরাসরি পুতিনের কাছে আবেদন করেছেন।

মস্কোতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সময় মোদি তাকে বলেন, যুদ্ধের ময়দানে কোনও সমাধান পাওয়া যাবে না।

‘ভারত সর্বদা আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বসহ জাতিসংঘের সনদকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও সমাধান নেই। সংলাপ এবং কূটনীতিই এগিয়ে যাওয়ার পথ,’ প্রধানমন্ত্রী মোদি নৈশভোজের সময় পুতিনকে এসব কথা বলেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া ভারতীয় এই প্রধানমন্ত্রী অসাধু ট্রাভেল এজেন্টদের মাধ্যমে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগদান করা প্রতারিত ভারতীয় নাগরিকদের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, সোমবার রাতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মোদির নৈশভোজ ছিল। সেখানে তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মোদিকে অভিনন্দন জানান তিনি। ওই নৈশভোজেই পুতিনের কাছে একটি আবেদন জানান মোদি।

তিনি বলেন, রাশিয়ায় যে ভারতীয়রা আছেন, বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছে। পুতিন যেন যুদ্ধ থেকে ভারতীয়দের অব্যাহতি দেন। ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, নৈশভোজেই মোদির এই আবেদনে সম্মতি জানিয়েছেন পুতিন।

এনডিটিভি বলছে, উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়ার প্রলোভনে এজেন্টদের হাতে প্রতারিত হওয়ার পরে প্রায় দুই ডজন ভারতীয় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই বছরের শুরুর দিকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওতে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার একদল পুরুষকে দেখানো হয়েছে। রুশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা সেই ব্যক্তিরা দাবি করেন, তারা ইউক্রেনে যুদ্ধে লড়তে প্রতারিত হয়েছে। লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত দুই ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বহু ভারতীয় রাশিয়ায় আটকে পড়েছেন। তারা বড় বেতনের কাজের আশায় রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। এখন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

মোদি ওই সমস্ত ভারতীয় যাতে দেশে ফিরে আসতে পারেন, সেই আবেদন জানিয়েছেন। সূত্রের দাবি, মোদির সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন পুতিন। ভারতীয়দের সেনাবাহিনী থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ভারতীয়রা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট।

উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় রাশিয়ায় পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদি। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মস্কোতে মোদির এটিই প্রথম সফর। মস্কোতে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে মোদিকে স্বাগত জানান রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তরুভ।

এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপ এবং আমেরিকা রাশিয়া-বিরোধী মঞ্চ তৈরি করলেও ভারত কোনোপক্ষেই যোগ দেয়নি। তারা এখনও পর্যন্ত জাতিসংঘে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কও অটুট রেখেছে ভারত।

রাশিয়া থেকে তেল কিনছে মোদির সরকার। যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের চাপের মুখেও পড়তে হয়েছে ভারতকে। রাশিয়াও ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মোদির রাশিয়া সফরও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে, নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আর কী অর্থ হতে পারে, সে বিষয়ে সন্দিহান ওই দেশগুলো। লন্ডনের কিংস কলেজে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর ক্রিস্টোফ জাফরেলট জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।

টিএম