তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনার আবারও তীব্র সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও গঙ্গা চুক্তির পুনর্নবায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিয়েছেন তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ পানি পাবেন না।’’

তিনি বলেন, গঙ্গার ভাঙনে যে বাড়ি তলিয়ে গেছে, সেগুলো করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ৭০০ কোটি টাকার তহবিল আজ পর্যন্ত দেয়নি। ফারাক্কা চুক্তির পুনর্নবায়ন করা হলে বিহারও ভাসবে। এখানে মূল পক্ষ আমরা। অথচ আমাদের জানানো হল না। বলছে তিস্তার পানি দেবে (বাংলাদেশকে)। পানি রয়েছে যে দেবে? উত্তরবঙ্গে কেউ খাবার পানি পাবেন না।

মমতা বলেন, ‘‘আমাদের না জানিয়ে ফারাক্কা চুক্তি রিনিউ করা হচ্ছে। বাংলায় বর্ষা বেশি। নদীমাতৃক দেশ। এখানে নদ-নদী, সমুদ্র, পুকুর বেশি। অনেক পুকুর কেটেছি। জল ধরি, ভরি। উপকূলীয় অঞ্চলও রয়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যায় ভাসছে। সিকিমে বৃষ্টি। ধস নেমেছে। পর্যটক আটক। তারা যাতে ফিরে আসতে পারেন। বর্ষায় পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চার না করাই ভালো’’

পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গঙ্গার ভাঙন কেন্দ্রের দেখার কথা। ১০-১২ বছর ধরে দেখছে না। ফারাক্কার ড্রেজিং করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে যখন চুক্তি হয়, তখন কথা ছিল, বাংলাদেশে যে জল যাচ্ছে, আমাদের যাতে সমস্যা না হয়, ড্রেজিং করা হবে। ভাঙনে অনেক বাড়ি তলিয়ে গেছে। ৭০০ কোটি টাকার প্যাকেজ তৈরি হয়। আমি এমপি ছিলাম, জানতাম। আজ পর্যন্ত দেয়নি।’’

এর আগে, গত মাসের শেষের দিকে নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই সময় নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের দিকে তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও পরিচালন পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল শিগিগিরই বাংলাদেশ সফর করবে।

নরেন্দ্র মোদির সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘ এক চিঠি লেখেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেই চিঠিতে তিনি বলেন, তার রাজ্যের অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হওয়া উচিত নয়।

এমনকি চিঠিতে মমতা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করা সম্ভব নয়। কারণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষের সেচ ও পানীয়র জন্য পানির প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে গেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে— যদি বাংলাদেশের সাথে পানি ভাগাভাগি করা হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ সেচের পানির অপ্রতুলতার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী তিস্তা কংশে হিমবাহে উৎপন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে নদীটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালে তিস্তার মূল এলাকাগুলো ভারতকে বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে।

২০১১ সালে ভারত তিস্তা নদীর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে সম্মত হয় এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রাখতে সম্মত হয় দেশটি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী শুরু থেকেই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন।

সম্প্রতি তিস্তা নদীর ওপর ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে চীন। প্রকল্পটির লক্ষ্য নদী অববাহিকাকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং গ্রীষ্মকালে পানির সংকট মোকাবিলা করা। চীনের এই প্রস্তাবের পর আলোচিত তিস্তা প্রকল্পে ভারতের পক্ষ থেকেও অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।

এসএস