ফ্রান্সের নির্বাচনে বামপন্থিদের জোট পার্লামেন্টের বেশিরভাগ আসনে জিতেছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট দ্বিতীয় অবস্থানে আর উগ্র ডানপন্থি দল রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে।

মূলত ডানপন্থি দলটি নির্বাচনে জেতার আশা করলেও তারা নেমে গেছে তৃতীয় অবস্থানে। অন্যদিকে বামপন্থিদের জোট বেশিরভাগ আসনে জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না কোনও দল।

সোমবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের অতি-ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি ব্যাপকভাবে এই নির্বাচনে জয়লাভ করবে বলে আশা করা হলেও এর পরিবর্তে তারা পরাজিত হয়েছে এবং তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। রোববার রাতে বা সোমবার ভোরে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ মাত্র চার সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে এই নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং এই নির্বাচনে নিউ পপুলার ফ্রন্ট নামে একটি বামপন্থি জোট সর্বাধিক আসন জিতেছে। অবশ্য কোনো একটি জোট প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ইউরোপের এই দেশটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফরাসি এই প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। মেরিন লে পেনের উগ্র ডানপন্থি দল সংসদে আগের চাইতে অনেক বেশি আসনে জিতেছে তবে সেটি প্রত্যাশার চাইতে কম।

পারমাণবিক শক্তিধর এবং প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি ফ্রান্সের নির্বাচনের এই ফলাফল ইউক্রেনের যুদ্ধ, বৈশ্বিক কূটনীতি এবং ইউরোপের অর্থনৈতিক স্থিতির ওপর প্রভাব ফেলবে।

এদিকে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা নিয়ে আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক দর কষাকষি চলতে পারে। ম্যাক্রোঁকে হয়তো এমন এক প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে কাজ করতে হবে, যিনি তার বেশিরভাগ অভ্যন্তরীন নীতির বিরোধী হতে পারেন।

আর এই পূর্বাভাস সঠিক হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বড় রকমের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

বিবিসি বলছে, ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) এই নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে জয়লাভ করেছে, এবং তারপর থেকে সকল জনমত জরিপ রান-অফ রাউন্ডেও দলটির বিজয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। তবে এর পরিবর্তে, ফ্রান্স এখন একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতো কিছু নেই।

আরএন নেতা জর্ডান বারডেলা তাদের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকানোর জন্য ‘অপ্রাকৃতিক রাজনৈতিক জোটকে’ দায়ী করেছেন। আমরা ক্ষমতার জন্য ক্ষমতা চাই না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এছাড়া মাত্র সাত মাস আগে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ কর্তৃক নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল বলেছেন, তিনি সকালে পদত্যাগ করবেন। যদিও তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তার জোট পূর্বাভাস দেওয়া আসনের চেয়ে তিনগুণ জিততে চলেছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন প্রথম দফার ভোটে আরএন ও সমমনা দলগুলো ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে মধ্যপন্থি এনসেম্বল ব্লক প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিল তৃতীয় স্থানে।

যেসব প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেয়েছেন, তাদের আর দ্বিতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি। এর মধ্যে লে পেনের জোট থেকে ৩৯ জন, বাম জোট থেকে ৩২ জন, ম্যাক্রোঁর জোট থেকে দুই জন, রক্ষণশীল এলআর থেকে একজন এবং অন্যান্য ডান দল থেকে দুই জন রয়েছেন।

বাকি ৫০১টি আসনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে দুই থেকে চারজন প্রার্থীর মধ্যে। ফরাসি পার্লামেন্টে ম্যাজিক ফিগার ২৮৯। অর্থাৎ, যে দলের কাছে ২৮৯টি আসন থাকবে, তারাই সরকার গড়তে পারবে।

দ্বিতীয় রাউন্ডের এই ভোটের পর ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কে নেতৃত্ব দেবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

টিএম