চিতওয়ানের নারায়ণঘাটে নারায়ণী নদীর ঢেউয়ের কবলে পড়া একটি বুদ্ধমূর্তি দেখা যাচ্ছে। শনিবারের ছবি

নেপালে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন আরও ৮ জন। ভারী বৃষ্টির জেরে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।

এছাড়া গত এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বন্যা, ভূমিধস ও বজ্রপাতে কমপক্ষে ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। রোববার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার কারণে নেপালে গত ৩৬ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা রোববার বলেছেন। এছাড়া এই দুর্যোগের কারণে দেশটির প্রধান প্রধান মহাসড়কসহ বহু রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে।

পুলিশ মুখপাত্র দান বাহাদুর কারকি জানিয়েছেন, আটজন নিখোঁজ হয়েছেন। তারা হয় বন্যায় ভেসে গেছেন বা ভূমিধসের কারণে মাটিতে চাপা পড়েছেন। আর আরও ১২ জন আহত হয়েছেন এবং তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রয়টার্সকে কারকি বলেন, ‘উদ্ধার কর্মীরা ভূমিধস দূর করার এবং রাস্তা চালুর চেষ্টা করছেন, ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে।’

দক্ষিণ-পূর্ব নেপালে কোশি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে একজন জেলা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই নদীর কারণে প্রায় প্রতি বছর পূর্ব ভারতের বিহার রাজ্যে মারাত্মক বন্যা হয়ে থাকে। সুনসারি জেলার সিনিয়র কর্মকর্তা বেদ রাজ ফুয়াল রয়টার্সকে বলেছেন, ‘কোশিতে পানির প্রবাহ বাড়ছে এবং আমরা বাসিন্দাদের সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় কোশি নদীতে পানির প্রবাহ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ ৬৯ হাজার কিউসেক, যা নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ তথা সেকেন্ডে দেড় লাখ কিউসেকের দ্বিগুণেরও বেশি। মূলত কিউসেক হল পানির প্রবাহের পরিমাপ এবং এক কিউসেক প্রতি সেকেন্ডে এক ঘনফুটের সমান।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিমে নারায়ণী, রাপ্তি ও মহাকালী নদীর পানির প্রবাহও বাড়ছে। পাহাড় ঘেরা কাঠমান্ডুতে বেশ কয়েকটি নদীর পানি তীর উপচে পড়েছে, রাস্তা প্লাবিত হয়েছে এবং অনেক বাড়িঘরও প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে লোকেদের কোমর-সমান পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে বা বাসিন্দাদের তাদের ঘর থেকে পানি বাইরে বের করার জন্য বালতি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।

গত জুন মাসের মাঝামাঝি বার্ষিক বর্ষাকালীন বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে নেপালে ভূমিধস, বন্যা এবং বজ্রপাতে অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন।

মূলত বর্ষা মৌসুমে পার্বত্য নেপালের বেশিরভাগ অংশে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যায় প্রতি বছর শত শত লোক মারা যায়। এই মৌসুম সাধারণত জুনের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে থাকে।

এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে গত কয়েক দিনে বন্যায় কয়েক ডজন মানুষ মারা গেছেন এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

টিএম