ইরানের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। একই সঙ্গে তিনি সংস্কারপন্থী ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নেরও প্রত্যাশা জানিয়েছেন। শনিবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এক বিবৃতিতে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ‌‌আমি উভয় দেশের ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গভীর করার বিষয়ে আমার আগ্রহ ও পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

দীর্ঘ সাত বছরের বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে গত বছরের মার্চে আঞ্চলিক দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। চীনের মধ্যস্থতায় গত বছর যুগান্তকরী এক চুক্তির মাধ্যমে শিয়াপন্থী মুসলিম অধ্যুষিত ইরানের সঙ্গে সুন্নিপন্থী সৌদি আরবের সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

এর আগে, ২০১৬ সালে সৌদিতে এক শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ওই ঘটনার পর পরই ইরানে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় সৌদি। জবাবে ইরানও সৌদিতে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে। পরবর্তী বছরগুলোতে  ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননে চলমান গৃহযুদ্ধে রীতিমতো মুখোমুখী অবস্থান গ্রহণ করে সৌদি ও ইরান— যা দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও বৈরী করে তোলে।

মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে সৌদি ও ইরান— উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বৃহৎ এ দুটি দেশ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এতদিন হুমকির মুখে ছিল।

শুক্রবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। দেশটির নির্বাচনের রানঅফে কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলিকে হারিয়ে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।

মেয়াদের আড়াই বছরের মাথায় গত ২০ মে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তার মৃত্যুর পর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দেশটিতে ক্ষমতাসীন কট্টর ইসলামপন্থী সরকার। ২৮ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় রানঅফে গড়ায়।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত রানঅফ নির্বাচনে মোট ৬ জন প্রার্থী অংশ নেন। তারা হলেন মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী, সাঈদ জালিলি, মোহাম্মদ বাকের কলিবফ, আলী রেজা যাকানি, সাইয়্যেদ আমির হোসেন কাজীজাদেহ হাশেমি ও মাসুদ পেজেশকিয়ান।

নির্বাচনে লড়াই হয়েছে মূলত সাঈদ জালিলি ও মাসুদ পেজেশকিয়ানের মধ্যে। ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জালিলি কট্টরপন্থী এবং মাসুদ সংস্কারপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। তবে উভয়েই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ।

গতকাল ভোটের পর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল থেকে জানা গেছে, মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট এবং সাঈদ জলিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ভোট। ফলাফল ঘোষণার পরপরই রাজধানী তেহরানসহ অন্যান্য শহরে বিজয় উদযাপন করতে নেমেছেন পেজেশকিয়ানের সমর্থকরা।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।

এসএস