মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তা চলবে।

গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ভোটার ভোট না দেওয়ায় সেই নির্বাচন বাতিল করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা হিসেবে মোট ভোটারের ৬০ শতাংশেরও কম ভোটার ভোট দিয়েছিলেন সেদিন।

এই নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নাম মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং সাঈদ জলিলি। উভয়েই দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির (৮৫) ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

তেহরানের প্রত্যাশা, গতবারের চেয়ে এবার বেশি ভোট পড়বে ব্যালট বাক্সে। শুক্রবার ভোট শুরুর পর এক ভিডিওবার্তায় খামেনি বলেন, “আমি শুনেছি যে গত প্রথমবারের (২৮ জুন) তুলনায় আজ জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেশি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, শেষ পর্যন্ত যেন আমরা সন্তোষজনক সংবাদ পাই।”

কট্টর ইসলামপন্থী দেশ ইরানে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভোটারদের ভোট প্রদানের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ ভোটার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে ভোটার টার্নআউটের হার ছিল আরও কম— মাত্র ৪১ শতাংশ।

ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারের মতো নয়। দেশটির ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। প্রেসিডেন্ট মূলত তার প্রধান সহকারী। তবে সর্বোচ্চ নেতার উত্তরাধিকারী বাছাই সম্পর্কিত যে রাষ্ট্রীয় কমিটি রয়েছে, পদাধিকার বলে সেটির সদস্য প্রেসিডেন্ট।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কঠোর ইসলামি শাসন, ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ এবং রাজনৈতিক ও সমাজিক স্বাধীনতার অভাবের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ দিন দিন কমছে।

তার ওপর ২০২২ সালে হিজাব ঠিকমতো না পরায় ইরানি-কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির গ্রেপ্তার ও কারাগারে নির্যাতনের জেরে নিহত হওয়া এবং তার জেরে দেশজুড়ে সৃষ্ট বিক্ষোভকে নির্মম ভাবে দমনের পর থেকে দেশের ভেতর ইরানের ইসলামপন্থি শাসকদের জনপ্রিয়তা আরও হ্রাস পেয়েছে।

১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেপিদেহ রয়টার্সকে বলেন, “আমি ভোট দেবো না। মূলত মাশা আমিনির ঘটনার জেরেই আমি এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ‘না’ বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি একটি মুক্ত দেশ চাই, মুক্ত জীবন চাই।”

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ