পাঁচ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘‘নিষ্ঠুর এবং নির্মমভাবে’’ ধর্ষণের দায়ে জাপানি এক নরসুন্দরকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি বেত্রাঘাতের সাজা দিয়েছে সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রথমবারের মতো প্রথম কোনও জাপানি নাগরিক হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী ইকো কিতা। পেশায় নরসুন্দর এই জাপানিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ওই সাজা দিয়েছেন আদালত। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত জাপানি দূতাবাস বিবিসিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ইকো কিতাকে সাড়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ বার বেত্রাঘাতের সাজা দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরে ব্যাপক বিতর্কিত ও বহুল প্রচলিত শারীরিক সাজার একটি এই বেত্রাঘাত। দেশটিতে ভাঙচুর, ডাকাতি এবং মাদকপাচারের মতো অপরাধের ঘটনায় এই সাজা বাধ্যতামূলক ভোগ করতে হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় নাইট লাইফ জেলার ক্লার্ক কোয়েতে ওই ছাত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন কিতা। ওই সময় ছাত্রীর বয়স ছিল ২০ বছর এবং অতীতে কখনই কিতার সাথে তার দেখা হয়নি। ওই তরুণী সেখানে নেশাগ্রস্ত ছিলেন। পরে সেখান থেকে তাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণ করেন কিতা। একই সঙ্গে ধর্ষণের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন এবং পরে তার এক বন্ধুর কাছে ভিডিও পাঠিয়ে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী ওই তরুণী ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে যান এবং সেদিনই পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ ওই দিনই কিতাকে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন জাপানি এই নরসুন্দর।

সিঙ্গাপুরের পুলিশ কিতার মোবাইল ফোনে ধর্ষণের দুটি ভিডিও পেয়েছে। দেশটির আদালতের বিচারক এদিত আবদুল্লাহ এই নিপীড়নের ঘটনাকে ‘‘নিষ্ঠুর এবং নির্মম’’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘‘ভুক্তভোগী তরুণী ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিষ্কারভাবে মাতাল ছিলেন। এমনকি নিজের খেয়াল রাখার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না।’’ ভুক্তভোগী তরুণী যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রাথমিক সম্মতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বলে আসামিপক্ষের উপস্থাপন করা যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।

সিঙ্গাপুর বলেছে, সহিংস অপরাধ ঠেকানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে বেত্রাঘাত। তবে এর স্পষ্ট কোনও প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় কিছু মানবাধিকার গোষ্ঠী।

সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাজা হিসেবে কাঠের তৈরি লাঠি দিয়ে উরুর পেছনে আঘাত করার বিধান রয়েছে। এই আঘাতের ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তির শরীরে স্থায়ী দাগ তৈরি হয়। মানবাধিকার সংস্থা ট্রান্সফর্মেটিভ জাস্টিস কালেক্টিভের তথ্য অনুযায়ী, বেতের পরিমাপ সাধারণত প্রায় দেড় মিটার (৩.২ ফুট) লম্বা এবং ১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার ব্যাস হয়ে থাকে।

দেশটিতে অপরাধের এই সাজার প্রচলন অনেক পুরোনো। ১৯৯৪ সালে ১৯ বছর বয়সী মাইকেল ফ্যা নামের এক মার্কিন নাগরিককে ছয়বার বেত্রাঘাতের সাজা দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই সাজার বিধান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এই সাজা বাতিলের আহ্বান জানালেও সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ ফ্যাও তা করেনি। বরং বেত্রাঘাতের সংখ্যা কমিয়ে ফ্যাওয়ের সেই সাজা কার্যকর সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস