স্বঘোষিত ধর্মগুরু নারায়ন সাকার হরি ওরফে ভোলে বাবার গাড়ির ধুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে হুড়োহুড়ির কারণে সৃষ্ট পদদলনের জেরেই ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এ তথ্য।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে উত্তরপ্রদেশের হাথরাস জেলার সিকান্দাররাউয়ে ধর্মগুরু নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ভোলে বাবার সৎসঙ্গ (ধর্মীয় সভা) শেষে পদদলনে মারা গেছেন ১২১ জন। মৃতদের মধ্যে অন্তত ১০৬ জন নারী ও ৭ জন শিশু। এছাড়া আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ২৭ জন।

ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ভারতীয় ফৌজদারি বিধির ১০৫, ১১০, ১২৬ (উপধারা ২), ২২৮ এবং ২৩৮ ধারায় একাধিক মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। মামলার প্রাথমিক এজাহার থেকে জানা গেছে, এই ধর্মীয় সভার আয়োজন করেছিল ‘মানব মঙ্গল সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান’ নামের একটি সংস্থা। সভা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে যে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিল সংস্থাটি, সেখানে বলা হয়েছিল যে ৮০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে সেই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সভা চলাকালে শৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন মানব মঙ্গল সদ্ভাবনা অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা। এ সময় মাত্র ৪০ জন পুলিশ সদস্যের একটি টিম।

নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন দুরাবস্থার সত্ত্বেও বড় ধরনের কোনো প্রকার গণ্ডগোল ছাড়াই শেষ হয় সভা, বাবা নারায়ণ সাকার হরিও সভা শেষ করে স্বাভবিকভাবেই তার জন্য অপেক্ষমান গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এ সময় উৎসাহী ভক্ত-দর্শকদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছিলেন ওই ধর্মগুরুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা।

ভোলে বাবার গাড়ির ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর তারা ব্যারিকেড তুলে নন। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই তার গাড়ির চাকা থেকে ছিটকে পড়া ধুলো সংগ্রহের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় ভক্তদের মধ্যে। এ সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা পিছিয়ে পড়েন এবং তাদের অনেকই পদদলনের শিকার হয়ে সেখানেই মারা যান।

এ ঘটনায় মানব মঙ্গল সদ্ভাবনা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আসামি করে মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। মামলার আসামি হিসেবে ভোলে বাবার নামও নেই।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য বলেছেন, এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হবে এবং দোষীদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং এবং আহতের পরিবারকে ৫০ হাজার রুপি সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শোক জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ও সমাজবাদী পার্টির প্রেসিডেন্ট অখিলেশ যাদবও।

স্বঘোষিত ধর্মগুরু বাবা নারায়ন হরি ওরফে ভোলে বাবার প্রকৃত নাম সুরাজ লাল। তিনি উত্তর প্রদেশের ইটাহ্‌ জেলার পাতিয়ালি পঞ্চায়েতের বাহাদুরনগরী গ্রামের বাসিন্দা। সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা সুরাজ একসময় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হেড কনস্টেবল ছিলেন। পরে ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ধর্মীয় বাণী প্রচারে মন দেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে নারয়ণ সাকার হরি রাখেন।

সূত্র : এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ