ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী।

স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারক ‘ভোলে বাবা’র ‘সৎসঙ্গ’-এ ওই ঘটনা ঘটে। এদিকে হাথরাসে পদপিষ্টের আগের মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক পদদলনের ঘটনার আগে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেটাই এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়া টিভি নিউজ।

গতকালের এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে পুণ্যার্থী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে নানা তথ্য উঠে আসছে। কেউ দাবি করেছেন, ধর্মগুরু নারায়ণ সাকার বিশ্ব হরি ওরফে ভোলে বাবার পদধূলি নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি হতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে ।

কেউ আবার দাবি করেছেন, ভোলে বাবার কনভয় যাওয়ার জন্য পুণ্যার্থীদের আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি চলে যেতেই গেট খুলে দেওয়া হয়, আর হুড়মুড়িয়ে বেরোনোর চেষ্টা করতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।

আবার কেউ দাবি করেছেন, রাস্তার পাশে কয়েক ফুট নিচু নালা ছিল। ভিড়ের চাপে সেই নালায় একের পর এক পুণ্যার্থী হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আর তাদের ওপর দিয়ে জনতার স্রোত চলে গেছে। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের জমায়েত হয়েছিল ওই অনুষ্ঠানে। মঞ্চে ভোলে বাবা বক্তৃতা করছিলেন। মাঝেমাঝে গান, আর তার তালে তালে নাচছিলেন পুণ্যার্থীরা।

এদিকে পদপিষ্টের ঘটনার আগের সেই মুহূর্ত প্রকাশ্যে এসেছে। মূলত ভাইরাল একটি ভিডিওতে সেখানকার অবস্থা দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অনুষ্ঠানের শামিয়ানার নিচে হাজার হাজার পুণ্যার্থী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের কেউ আবার রয়েছেন করজোড়ে।

কেউ আবার দু’হাত তুলে রয়েছেন। আনন্দে, উল্লাসে চিৎকার করছেন। তারপর আবার গানের তালে হাত-পা ছুড়ে নাচছেন। কিছু নারীকে শামিয়ানা ধরে রাখার জন্য বসানো খুঁটিকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

তারপরই ভিডিওটি শেষ হয়ে যায়। ৪২ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অনুষ্ঠান চলাকালীন ওই ভিডিও ফুটেজটি ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হতেই দুর্ঘটনা ঘটে। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১২২ জনের।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে তাঁবুর মধ্যে অনুষ্ঠান চলছিল। গরমের কারণে পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীনই ভক্তদের অস্বস্তিতে কাটাতে হয়েছে। তাই অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

হিন্দুস্তান টাইমসকে ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ‘সবাই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল, কিন্তু বের হবার পথ ছিল না। একজন আরেকজনের ওপরে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে গেছেন। আমি নিজেও বেরোতে গিয়ে দেখি মোটরসাইকেল রাখার কারণে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।’

ভারতের ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যায় মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার এক মন্দিরে নতুন বছরের অনুষ্ঠান চলাকালীন অবৈধ বাজি বিস্ফোরণ হয়ে অন্তত ১১২ জন মারা গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, ২০১৬ সালের ওই ঘটনায় কংক্রিটের ভবন ধসে গিয়েছিল এবং মন্দিরটিতেও আগুন ধরে গিয়েছিল।

এছাড়া মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরের কাছে সেতু ভেঙ্গে পড়ে ১১৫ জন ভক্ত মারা গিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সেদিন ওই সেতুর কাছে প্রায় চার লাখ ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। এরই মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, সেতুটি ভেঙে পড়তে চলেছে।

ভারতশাসিত কাশ্মিরের জনপ্রিয় তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে ২০২২ সালে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১২ জন।

টিএম