বলছেন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা
গাজায় হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অনস্বীকার্য
টানা প্রায় ৯ মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। বর্বর এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উঠেছে গণহত্যার অভিযোগও। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, গাজায় চলমান এই যুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অনস্বীকার্য।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
— Reuters (@Reuters) July 3, 2024
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের দায়ে পদত্যাগ করা বহু সংখ্যক সাবেক মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় অনস্বীকার্য সম্পৃক্ততার জন্য মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেছেন।
এক যৌথ বিবৃতিতে ১২ জন সাবেক মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন মার্কিন আইন লঙ্ঘন করছে এবং মিত্র ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য এই প্রশাসন আইনের নানা ফাঁক-ফোকরের আশ্রয় নিচ্ছে।
অবশ্য সাবেক মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের এই যৌথ বিবৃতির বিষয়ে হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট উভয়ই তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের নামে গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজায় নিরলস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই আগ্রাসন গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে এবং এই উপত্যকায় মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
মূলত গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড এবং বর্বর এই আগ্রাসনে মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনের দায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
তবে যুদ্ধ শুরুর পর ওই ১২ মার্কিন কর্মকর্তার পদত্যাগ ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে বাইডেন সরকারের মধ্যে কিছু ভিন্নমত প্রতিফলিত করেছে। যদিও ওয়াশিংটন গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য চাপ দিয়ে আসছে এবং গাজায় সাহায্য সরবরাহ আরও বাড়ানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বাইডেন প্রশাসনকে অভিযুক্ত করে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, শিক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র বিভাগ, হোয়াইট হাউস এবং সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
সাবেক এই কর্মকর্তারা তাদের বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জন্য আমেরিকার কূটনৈতিক আবরণ এবং ক্রমাগত অস্ত্র সরবরাহ গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি জনগণের হত্যা এবং জোরপূর্বক অনাহারে রাখার বিষয়ে আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সম্পৃক্ততা অনস্বীকার্য বলে নিশ্চিত করেছে।’
একইসঙ্গে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে এবং গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দি এবং ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে মার্কিন সরকারকে তার ‘প্রয়োজনীয় এবং হাতে থাকা অন্যান্য উপায়’ ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তারা মার্কিন সরকারকে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করার এবং গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তার সরবরাহ আরও সম্প্রসারণের জন্য তহবিল দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। গাজায়ও ব্যাপক ক্ষুধা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
টিএম