ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে ঐক্যের উদ্যোগ
ফ্রান্সে গত রোববারের নির্বাচনে আরএন দলের সাফল্যের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটগ্রহণের আগে ঐক্যের চেষ্টা করছে মধ্য ও বামপন্থি শিবির। উগ্র ডানপন্থিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন।
গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিজের দলের ভরাডুবি ও উগ্র ডানপন্থি শিবিরের জয়ের পর আচমকা আগাম সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। কিন্তু তার সেই কৌশলে কাজ হয়নি।
বিজ্ঞাপন
গত রোববার প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আবার ভালো ফল করেছে উগ্র ডানপন্থি ‘রাসঁব্লে নাসিওনাল’ বা আরএন দল। তবে কোনো শিবির সরাসরি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার ভোটগ্রহণ হবে।
ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে এই দ্বিতীয় সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আসছে বাকি দলগুলো। উগ্র দক্ষিণপন্থি শক্তির উত্থান রুখতে তারা মতবিরোধ ভুলে ঐকবদ্ধ হয়ে ভোটারদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। এবারও সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি শিবির ও বাম দলগুলোর জোট সোমবার সংসদ নির্বাচনের আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য রণকৌশল স্থির করার উদ্যোগ শুরু করেছে। রোববারের নির্বাচনে বাম শিবির দ্বিতীয় ও ম্যাক্রোঁর শিবির তৃতীয় স্থান দখল করেছে।
একাধিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, বিরোধী ঐক্য সম্ভব হলে আরএন দল ২৮৯ আসনে জয়লাভ করে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। রোববার ফল প্রকাশের পর ম্যাক্রোঁ উগ্র দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণতান্ত্রিক জোট গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রার্থীরা দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সুযোগ পাচ্ছেন। সংবাদসংস্থা এএফপির সূত্র অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই মধ্যপন্থি ও বাম শিবিরের দেড়শোরও বেশি প্রার্থী সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরএন দল ভোটারদের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্যায়েও জোরালো সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে সংসদে ৭৬টি আসনে চূড়ান্ত ফল স্থির হয়ে গেছে। বাকি আসনগুলো দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে দলটি।
কাঙ্খিত ফল পেলে ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনও উগ্র দক্ষিণপন্থি দল ক্ষমতায় আসবে। ম্যাক্রোঁ ২০২৭ সাল পর্যন্ত নিজের কার্যকাল শেষ করলে তাকে এমন এক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন
অবশ্য আগাম নির্বাচন ডাকার কারণে তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আগামী রোববার আরএন চূড়ান্ত সাফল্য পেলে তার পদত্যাগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
ফ্রান্সে এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ফ্রান্সে চরম দক্ষিণপন্থিদের সাফল্য উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন, আরএন দল ইউরোপকে সমাধানের বদলে সমস্যা হিসেবে দেখে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক এই ফলকে ফ্রান্স ও ইউরোপের জন্য ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে ইতালির চরম দক্ষিণপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি ও হাঙ্গেরির উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়েছেন।
টিএম