প্রতীকী ছবি

ছোট-বড় সবারই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অবাধ বিচরণ। শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নয়, অনেকের পেশাগত কাজের ক্ষেত্র বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবেও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে।

আর তাই ‘ফেসবুক’ বা ‘ইনস্টাগ্রাম’র মতো সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যদি কেউ তার স্ত্রীকে বাধা দেয়, তাহলে সেটি নিষ্ঠুরতা বলে গণ্য হবে। ডিভোর্সের একটি মামলায় এমন কথাই বলেছেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গনার হাইকোর্ট।

সোমবার (১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮।

অবশ্য শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া নয়, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা যাবে না বা তার কাজের সুযোগে বাধা আসতে পারে এমন কিছুও করা যাবে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈবাহিক প্রেক্ষাপটে ‘নিষ্ঠুরতার’ সংজ্ঞা আরও প্রসারিত করে তেলেঙ্গানা হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, খ্যাতি, সামাজিক অবস্থান, বা স্বামী/স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর/স্বামীর কোনও কর্মকাণ্ড যদি কাজের সম্ভাবনাকে ক্ষতি করে তাহলে সেটি নিষ্ঠুরতা হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্য। উপরন্তু স্ত্রীকে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করা থেকে বঞ্চিত করাও নিষ্ঠুরতার সমান হতে পারে বলে আদালত উল্লেখ করেছে।

বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি এমজি প্রিয়দর্শিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ হিন্দু বিবাহ আইনের (এইচএমএ) অধীনে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য স্বামীর দায়ের করা আপিলের অনুমতি দেওয়ার সময় এই পর্যবেক্ষণ করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিচ্ছেদের আবেদন করে এক ব্যক্তি মামলা করেছিলেন তেলেঙ্গনা হাইকোর্টে। নিম্ন আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি এমজি প্রিয়দর্শিনীর ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, বিয়ে কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না।

আদালতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘এই বিষয়ে আদালতের ভূমিকা খুবই সীমিত এবং আদালত কখনও বৈবাহিক সম্পর্কে থাকতে (কাউকে বাধ্য করার জন্য) জল্লাদের ভূমিকা নিতে পারে না, বা কাউকে স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে জীবনযাপণ করতেও বাধ্য করতে পারে না।’

২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর ওই আবেদনকারী ব্যক্তির বিয়ে হয়। এক বছরের মধ্যেই সংসারে শুরু হয় অশান্তি। তাদের এক সন্তানেরও জন্ম হয়। ২০১২ সালে বিচ্ছেদের আবেদন করেন স্বামী। ২০২১ সালে ট্রায়াল কোর্ট স্বামীর সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী।

মামলার কথা শুনে ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ‘বিয়ে শুধুমাত্র কোনও আনুষ্ঠানিকতা নয়। একসঙ্গে ঘর বাঁধার ইচ্ছেতেই গড়ে ওঠে সম্পর্ক। কিন্তু যখন সেই সম্পর্ক শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন ডিভোর্সের আবেদন খারিজ করা ঠিক নয়। বিয়ের ভিতটাই যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন দাম্পত্য জীবনে ফেরার আর কোনও সম্ভাবনা থাকে না।’

মূলত এই যুক্তিতেই নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে ওই দম্পতিকে ডিভোর্সে সম্মতি দেন হাইকোর্ট।

টিএম