দাম বাড়িয়ে চাল বিক্রির অভিযোগে মিয়ানমারে বিভিন্ন সুপারমার্কেট চেইন কোম্পানির চার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জাপানিজ জয়েন্ট ভেঞ্চার এক কোম্পানির একজন নির্বাহীও রয়েছেন। সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার দেশটির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে রীতিমতো লড়াই করছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটি ২০২১ সাল থেকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে রয়েছে। ওই বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসে মিয়ানমারের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়; যা দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, চাল ব্যবসায়ী, কারখানার কর্মকর্তা ও খুচরা বিক্রেতাসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩১ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি করে চাল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানিয়েছে।

এদিকে, টোকিওতে জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে জাপানি এক নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, জাপান সরকার তার দ্রুত মুক্তির জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে চায়। আর এই প্রচেষ্টার মধ্যে জাপানি নাগরিকের নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করার মতো বিষয়গুলো রয়েছে বলে জানান তিনি।

জান্তা-নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলেছে, সুপারমার্কেট চেইন ইয়ন অরেঞ্জের নির্বাহী জাপানি নাগরিক ইয়ন কো। ইয়াঙ্গুন-ভিত্তিক বাণিজ্যিক কোম্পানি ক্রিয়েশন মিয়ানমারের সাথে যৌথ উদ্যোগে মিয়ানমারে সুপারমার্কেট বাণিজ্য করছেন তিনি। দাম বাড়িয়ে চাল বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন।

তবে এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে টেলিফোন করা হলেও জান্তার একজন মুখপাত্র সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সুপারমার্কেট চেইন ইয়ন অরেঞ্জের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, মিয়ানমারে কোম্পানির একজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে এবং তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জাপানি দূতাবাসের সাথে কাজ করছে।

মিয়ানমারের একটি চাল কারখানার একজন মালিক বলেছেন, সরকার নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রার হার ও কালো বাজারের হারের মধ্যে অসামঞ্জস্যের কারণে অনেক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক চড়াই-উতরাই পার করছে। বিশেষ করে আমদানিকৃত জ্বালানি ও সার কেনার মতো বেশিরভাগ লেনদেনে এই অসামঞ্জস্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‌‌‘‘সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রি করা আমাদের জন্য লাভজনক নয়।’’ তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখনও পর্যাপ্ত চাল আছে। সরকার দাম সীমিত করতে চায় বলেই এই অবস্থা হয়েছে।
 
কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াটের কালো বাজারের হার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত হারের তুলনায় অনেক বেশি। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিয়াটের বিনিময় হার মার্কিন এক ডলারে ২ হাজার ১০০ কিয়াট নির্ধারণ করলেও কালো বাজারে তা আরও অনেক বেশি।

গত মে মাসে ডলারের সাথে মিয়ানমারের মুদ্রার বিনিময় হার রেকর্ড তলানিতে পৌঁছায়। ওই সময় এক ডলারের বিনিময়ে সাড়ে ৪ হাজার কিয়াট পাওয়া যায়। এরপর থেকে কিয়াট আর ডলারের বিনিময় হার প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে বলে দেশটির তিনজন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস