কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল তুলে নিয়ে পাল্টা পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছেন এক বিক্ষোভকারী | ছবি : এএফপি

নতুন কর বৃদ্ধির পরিকল্পনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ সহিংসতায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনার জেরে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হলেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। বুধবার তিনি দেশটির কর বৃদ্ধির পরিকল্পনার প্রস্তাব সম্পর্কিত বিতর্কিত অর্থ বিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগে, কর বৃদ্ধি করে সংসদে পাস হওয়া নতুন একটি আর্থিক বিলের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী নাইরোবিতে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ ভবনে বিক্ষোভকারীদের ঢোকার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ঘের ঘটনাও ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ছোড়া গুলিতে অন্তত ২২ বিক্ষোভকারী নিহত হন।

সংঘর্ষের সময় কেনিয়ার সংসদ ভবনের একাংশে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে উইলিয়াম রুটো বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে কেনিয়ানরা এই বিল কোনোভাবেই চান না। তিনি বলেন, আমি পরাজয় স্বীকার করছি। একই সঙ্গে তিনি আইনে পরিণত করার জন্য বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন না বলেও ঘোষণা দেন।

২০২২ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটিতে এবারের এই বিক্ষোভ সবচেয়ে বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে প্রেসিডেন্ট রুটোর প্রশাসনের জন্য। আর এই বিক্ষোভের অগ্রভাগে আছেন দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠী। বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো বলেছেন, তিনি দেশের তরুণদের সাথে সংলাপে বসবেন।

‘‘আমি কেনিয়ার জনগণের কথা মনোযোগসহ শুনছি। যারা এই অর্থ বিল ২০২৪ এর বাস্তবায়ন চান না, আমি তাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করছি। আমি অর্থ বিল ২০২৪ এ স্বাক্ষর করব না। এটা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হবে। লোকজন এই বিল নিয়ে কথা বলছে।’’

তবে কেনিয়ার বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা বিল প্রত্যাহারের ঘোষণাকে জনসংযোগের কৌশল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হানিফা আদান নামের এক বিক্ষোভকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, ‘‘বিলটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আপনি কি মৃতদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারবেন?’’

বুধবার নাইরোবিতে সংসদ ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালানো বিক্ষোভকারীদের একজন এই হানিফা। তিনি প্রেসিডেন্ট রুটোর বিল প্রত্যাহারের ঘোষণাকে জনসংযোগ হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

করোনাভাইরাস মহামারী, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ ও দুই বছর ধরে দেখা দেওয়া খরার পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কেনিয়ায়। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত কেনিয়ানরা জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এর মাঝেই দেশটির সরকার ঋণের বোঝা কমাতে নতুন করে অতিরিক্ত ২৭০ কোটি ডলারেরও বেশি কর বৃদ্ধির একটি বিলের অনুমোদন দিয়েছে।

দেশটির নাগরিক নতুন এই কর বৃদ্ধি আইন বাতিলের দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করে আসছেন। বিক্ষোভকারীরা দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলের দিকে নাইরোবিতে উত্তেজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষ পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময় দেশটির আইনপ্রণেতারা কর বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিল নিয়ে সংসদে বিতর্ক করছিলেন।

সংসদ অধিবেশন চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ সংসদ ভবনের বাইরে জনতার ওপর তাজা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কেনিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (কেএনএইচআরসি) বলেছে, মঙ্গলবারের সহিংসতায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।

সূত্র: এএফপি।

এসএস