জার্মানির বখুমে একটি মসজিদে স্বস্তিকা চিহ্ন নিয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা, সাক্সনিতে একটি মুসলিম পরিবারের বাড়ির দরজায় উগ্রপন্থি প্রতিবেশীর গুলি করা— গত বছর জার্মানিতে এমন অন্তত এক হাজার ৯২৬টি ইসলামবিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি রাজধানী বার্লিনে এক মুসলিম নারীকে রেলের ট্র্যাকে ধাক্কা দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি হামাসের কোনো সদস্য কি না? 

ইসলামবিদ্বেষ এবং মুসলিমবিরোধী ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী এনজিও নেটওয়ার্ক ক্লেইম বলছে, ২০২৩ সালে জার্মানিতে এমন ঘটনা বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। বিশেষ করে ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলার পর এ ঘটনাগুলো আরো বেড়েছে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি।

এরপরও কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনা বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে না এবং মনোযোগী হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি। ২৪ জুন বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্লেইম-এর কর্মকর্তা রিমা হানানো বলেন, জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোও উগ্র ডানপন্থি, ইসলামবিরোধী দলগুলোর মতো একই নীতি গ্রহণ করছে।

সম্প্রতি জার্মান রাজনীতিতে উত্থান হয়েছে উগ্র ডানপন্থি হিসাবে পরিচিত দ্য অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) নামের রাজনৈতিক দলটির। মুসলিমরা জার্মান সমাজভুক্ত নয় বলে মনে করে দলটি। এমনকি অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে এএফডি।

হানানো বলেন, ‘‘যারা মুসলিম কিংবা যাদের দেখতে মুসলিমদের মতো মনে হয়, তাদের জন্য এখন আরা রাস্তা, বাস বা মসজিদ নিরাপদ নয়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘মুসলিমবিদ্বেষী বর্ণবাদ আজকের মতো করে কখনও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। এটি সমাজের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে।’’

ক্লেইম তাদের প্রতিবেদনে আরো জানিয়েছে, মুসলিমদের ধর্মীয় স্থান, কবরস্থান ও অন্যান্য জায়গায় ঘটা এসব ঘটনার মধ্যে শুধু ৯০টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগকারী সরাসরি সামনে আসতে ভয় পাওয়ার কারণেই মোট ঘটনার ছোট্ট একটি অংশ প্রশাসনের নজরে এসেছে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। 

ক্লেইম জানিয়েছে, বেশিরভাগ আক্রমণ ব্যক্তিপর্যায়ে ও মৌখিকভাবে করা হয়েছে। এসব আক্রমণের শিকার হয়েছেন নারীরা। এর মধ্যে চারটি হত্যাচেষ্টার ঘটনাও ছিল।

জার্মানিতে মুসলিমদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে ২০১৫-১৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া থেকে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী আসার কারণে মুসলিমদের সংখ্যা দেশটিতে ৫৫ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ৬.৬ শতাংশ।

• বেড়েই চলেছে মুসলিমবিদ্বেষ

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি দুই জার্মান নাগরিকের মধ্যে একজন ইসলামবিদ্বেষী। জার্মান সরকার এবং এনজিওগুলোও বলছে, ৭ অক্টোবেরর পর ইহুদিবিদ্বেষও বেড়েছে। হলোকাস্টের কারণে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিশেষভাবে সংবেদনশীল জার্মানি। ফলে জার্মান কর্তৃপক্ষ মুসলিম-বিরোধী ঘটনার চেয়ে এই ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনায় বেশি সোচ্চার।

জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক এক ভিডিও বার্তায় খুব আবেগময় হয়ে বলেছিলেন, জার্মানির মুসলিমদের একটি অংশ হামাসবিরোধিতা বা ইহুদিবিদ্বেষ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ‘খুব দ্বিধান্বিত’।

গত বছর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা নিয়ে স্বাধীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান সরকার। বৈষম্য মোকাবিলায় সেই প্রতিবেদনে একাধিক সুপারিশের উল্লেখ রয়েছে।

পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী লিজা পাউজ বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমবিরোধী এবং ইহুদিবিরোধী ঘটনাগুলো ছিল বেশ ‘নাটকীয়’। শৈশব থেকে যেন এই বিদ্বেষ দূর করা যায় সে লক্ষ্যে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরকার অর্থায়ন করছে বলেও জানান তিনি।

ক্লেইম-এর কর্মকর্তা হানানো বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, তার ওপর... আমরা যে বছরের পর বছর ধরে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছি, সেটিকেও খুব একটা আমলে নেয়া হয়নি। রিমা হানানো বলেন, ‘‘ইসলামবিরোধী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে লড়াই করার জন্য আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।’’ ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এসএস