সৌদির অসহনীয় গরম
মৃত হজযাত্রীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯০০, নিখোঁজ অনেকে
তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমে চলতি বছরের হজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯২২ জন হজযাত্রীর। পাশাপাশি, বহু সংখ্যক যাত্রীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সৌদির সরকারি প্রশাসন, মক্কার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং সৌদির বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের তথ্য সহায়তার ভিত্তিতে মৃত হজযাত্রীদের একটি সংখ্যাগত টালি করেছে বার্তাসংস্থা এএফপি। সেই টালির সর্বশেষ অবস্থা থেকে এই সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চলতি বছর হজ শুরু হয়েছে গত ১৪ জুন থেকে। সৌদির আবহওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহ ধরে মক্কার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। সোমবার মক্কার তাপমাত্রা ছিল ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন
মৃতদের অধিকাংশই মিসরের নাগরিক। মক্কার প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, হজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০ মিসরীয় হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
মিসরের বাইরে জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সেনেগাল, তিউনিসিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকরাও রয়েছেন মৃত হজযাত্রীদের তালিকায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এবার হজ করতে মক্কায় গিয়ে মারা গেছেন ২৭ জন বাংলাদেশি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৮ লাখ হজযাত্রী এবার হজ করতে সৌদি এসেছেন। বিদেশি হজযাত্রীদের অনেকেই মক্কার তীব্র গরমে অভ্যস্ত নন। তাছাড়া এই হজযাত্রীদের মধ্যে এমন হাজার হাজার যাত্রী রয়েছেন, যারা বিধি মেনে সৌদিতে আসেননি। ফলে প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে যাত্রীদের জন্য যেসব সুবিধা ও পরিষেবা বরাদ্দ করেছে সৌদির সরকার, সেসব তারা পাচ্ছেন না। অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশ করা এই যাত্রীরা এমনকি থাকা, খাওয়া এবং এয়ার কন্ডিশন সুবিধাও পাচ্ছেন না।
যেসব হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের একটি বড় অংশই অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
এছাড়া হজের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বহুসংখ্যক যাত্রী। এই গরমে নিরাপদ আশ্রয়ের বাইরে থাকা এই হজযাত্রীদের সবাই বেঁচে আছেন— এমন নিশ্চয়তা নেই। তাই সামনের দিনগুলোতে মৃত হজযাত্রীদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্বিগ্ন স্বজনরা
মাব্রুকা বিনতে সালেম সুশানা (৭০) তিউনিসিয়ার নাগরিক। তিনি এবং তার স্বামী মোহাম্মেদ প্রয়োজনীয় বৈধ নথিপত্র ছাড়াই হজ করতে সৌদি এসেছিলেন। গত শনিবার আরাফাত থেকে নিখোঁজ হন তিনি।
মোহাম্মেদ এখন মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালে স্ত্রীর খোঁজ করছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী একজন বয়স্ক নারী। প্রচণ্ড গরমে সে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এখন কোথায় আছেন জানি না। আমি হাসপাতলে হাসপাতালে তার খোঁজ করছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তার সন্ধান পাইনি।’
ঘাড়া মাহমুদ আহমেদ দাউদ নামের আরেক নারী হজযাত্রীও আরাফাত থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তিনিও হজে এসেছিলেন বৈধ নথিপত্র ছাড়া। সৌদিতে বসবাসকারী তার এক আত্মীয় এএফপিকে বলেন, ‘মিসর থেকে তার মেয়ে প্রতিদিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তার মায়ের খোঁজ জানার জন্য। আমি বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাইনি। কোনো হাসপাতালের মৃতদের তালিকায় তার নাম নেই। তাই আশা করছি, হয়তো সে বেঁচে আছে।
নিখোঁজ হজযাত্রীদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়রা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি আপলোড করে সহায়তার আকুতি জানিয়েছেন।
স্বজনদের উদ্বেগের আরেকটি কারণ হলো, সৌদি আরব দাপ্তরিকভাবে হজে অসুস্থ, মৃত এবং নিখোঁজ যাত্রীদের কোনো তালিকা বা সংখ্যা প্রকাশ করছে না। মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, গরমের কারণে শুধু রোববারই হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য তাপজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭০০ জনেরও বিশ হজযাত্রী।
গত বছর হজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন ২ শতাধিক হজযাত্রী। সেই তুলনায় এবার মৃতের সংখ্যা চারগুণেরও বেশি, যা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ