গত কয়েক দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেও বৃষ্টি হয়। এর মাঝেই ঘটে গেলে বড় দুর্ঘটনা। আসামের শিলচর থেকে শিয়ালদহের দিকে আসছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সিগন্যাল লাল থাকায় নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দাঁড়িয়েছিল ট্রেনটি। তখন সেই লাইনেই এসে পড়ে একটি মালবাহী ট্রেন।

সজোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। সংঘর্ষের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে কাঞ্চনজঙ্ঘা পেছনের কামরা আকাশের দিকে উঠে যায়। অন্যটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ যাত্রী। 

ঠিক এক বছর আগে গত জুনেই এমন এক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন। সেই ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় ৩০০ জন যাত্রী। 

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে। ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগায় মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ২৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। আহত হয়েছিলেন প্রায় ১২০০ জন।

শুধু করমণ্ডল এক্সপ্রেস নয়, ২০২৩ সালে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৭টি রেল দুর্ঘটনা হয়েছে ভারতে। করমণ্ডলের দুর্ঘটনা নিয়ে জুন মাসেই ছটি। সেই জুনেই ফের দুর্ঘটনার মুখে পড়ল ভারতীয় রেল। 

সোমবারের দুর্ঘটনা নিয়ে রেল সূত্রে খবর, ওই লাইনে সিগন্যালিংয়ের কাজ চলছিল। ট্রেন চালানো হচ্ছিল ম্যানুয়াল সিগন্যালে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ধীরে চললেও গতি কমায়নি মালবাহী গাড়িটি। রেলের প্রাথমিক অনুমান, রেড সিগন্যাল মানেননি মালবাহী গাড়ির চালক। সে কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে গিয়ে সেটি ধাক্কা দেয়।

সাধারণত যে লাইনে এক্সপ্রেস ট্রেন চলে, সে লাইনে মালবাহী ট্রেন চালানো হয় না। 

মনে করা হচ্ছে, একই লাইনে দুটি ট্রেন পাস করানোর পরিকল্পনা ছিল রেলের। তবে আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা করিয়ে তার পর মালবাহী ট্রেনটিকে পাস করানোর কথা। সে কারণেই মালবাহী ট্রেনটিকে লাল সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল।

রেলের অনুমান, মালবাহী ট্রেনের চালক ওই সিগন্যাল দেখতে পাননি। ফলে একই লাইনে এসে ধাক্কা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। 

এ ক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন প্রকাশ্যে আসছে। এখন যে কোনও রেল ইঞ্জিনে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকে। ইঞ্জিনের সামনে নির্দিষ্ট কোনও দূরত্বে যদি কোনও ট্রেন বা অন্য কিছু থাকে, তবে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই ওই ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়বে। একে ‘কবজ’ ব্যবস্থা বলা হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে মালগাড়ির ইঞ্জিনে কি সেই ব্যবস্থা ছিল না?

ভারতীয় রেল সূত্রের খবর, উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হলে পুরো ঘটনাটির উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে দেখা হবে।

এদিকে দুর্ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে বিএসএফ। তাদের ১০০ জন জওয়ান উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। রয়েছে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

বিপর্যয়ের কারণে কলকাতা-শিলিগুড়ি রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। রাজধানী এক্সপ্রেস, বন্দেভারত এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি ট্রেনের গতিপথ বদল এনেছেন কর্তৃপক্ষ।

রেল সূত্রে খবর, মালবাহী ট্রেনের চালক মারা গেছেন। সহ-চালক জীবিত আছেন, তবে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার গার্ডও মারা গেছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় রেলওয়ে মেল সার্ভিসের (আরএমএস) এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। শঙ্করমোহন দাস নামের ওই কর্মী কলকাতার বেলেঘাটার বাসিন্দা। তাদের জন্য রেল থেকে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। 

রেলমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, মৃতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। যারা গুরুতর আহত, তারা আড়াই লক্ষ রুপি এবং যারা কম আহত তারা ৫০ হাজার রুপি করে পাবেন।

এমএসএ