কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনো সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজই এখন প্রাথমিক লক্ষ্য। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষ। তদন্ত শেষেই এ বিষয়ে জানা যাবে। তবে, তার আগেই দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে একাধিক তথ্য সামনে আসছে। রেলকর্মীদের একাংশের দাবি, দুর্ঘটনার কবলে পড়া মালগাড়ির চালক সিগন্যাল মানেননি! সেই কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের লাইনে চলে এসেছিল মালগাড়িটি। তবে কী এই দুর্ঘটনার নেপথ্যেও রয়েছে সিগন্যাল ‘বিভ্রাট’?

ভারতীয় রেলের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সোমবার (১৬ জুন) ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাঙাপানি এবং আলুয়াবাড়ি অংশের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ‘অকেজো’ ছিল! স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় ওই অংশে খুবই ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। কখনও আবার ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়াও হচ্ছিল। সোমবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিটের দিকে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশন ছেড়ে এগোনোর পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় খুব ধীর গতিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চলছিল। ওই ট্রেনের জন্য ছিল বিশেষ কাগুজে ছাড়পত্র। রেলের পরিভাষায় যাকে ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ (পিএলসিটি) বলে। 

রেলের ওই সূত্রের দাবি, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ‘টিএ ৯১২’ ফর্ম দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চালাচ্ছিলেন চালক। ‘টিএ ৯১২’ কী? স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ হয়ে গেলে ওই নির্দেশের ভিত্তিতেই ট্রেন চালিয়ে থাকেন চালক। সিগন্যাল লাল থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন চালক।

রেল সূত্রে খবর, সকাল ৮টা ৪২ মিনিট নাগাদ রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ে মালগাড়িটি। তার পরই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে সজোরে ধাক্কা মারে। খেলনাগাড়ির মতো মালগাড়ির উপর উঠে পড়ে এক্সপ্রেসের পেছনের দিকের একাধিক বগি। লাইনচ্যুত হয় মালগাড়িও। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আট জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে যখন ম্যানুয়াল মেমো দেওয়া হলো, তখন মালগাড়ি কীভাবে এগিয়ে গেল? তাকেও কী ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল?

রেলের ওই সূত্রটির ব্যাখ্যা, ধরা যাক দু’টি ট্রেনের চালককেই ম্যানুয়াল মেমো দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, ওই ছাড়পত্র থাকলে চালক ট্রেন ধীরে ধীরে চালাবেন। ট্রেনের গতি কখনোই ঘণ্টা প্রতি ১০ কিলোমিটারের বেশি থাকবে না। তা হলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মালগাড়ির মধ্যে ১৫ মিনিটের ব্যবধান থাকার পরেও কেন একই লাইনে কাছাকাছি চলে এল দু’টি ট্রেন? যদিও রেলের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

তবে, এ বিষয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে বলেন, এই বিষয়টা এখনো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এখনোই এটা বলতে পারব না। আগে আমাদের লক্ষ্য উদ্ধার কাজের পর পরিষেবা চালু করা। তদন্ত ছাড়া এটা বলা সম্ভব নয়। অবশ্যই সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে তদন্ত হবে, তখনই এটা জানা যাবে।

কেএ