আরবি চান্দ্রবর্ষের হিসেব অনুযায়ী আজ রোববার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন করছে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল। তবে ব্যাপক গরম ও তাপপ্রবাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত চারটি দেশে ঈদের আমেজ সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

এই চার দেশ হলো লেবানন, ইরাক, মিসর এবং জর্ডান। বিশেষ করে যারা দরিদ্র, তাদের ভোগান্তি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

লেবাননের দরিদ্র শহর বালবেকের বাসিন্দা মোহাম্মেদ কাসেম আমিরাতভিত্তিক দৈনিক দ্য ন্যাশনালকে জানান গত কয়েক দিন ধরে অসহ্য গরমের কারণে তারা পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না।

‘এখানে অধিকাংশ মানুষের বাড়িতে এসি নেই। সিলিং কিংবা টেবিল ফ্যানই ভরসা। কিন্তু এখন ফ্যানের বাতাসেও শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকের বাড়িতে ফ্যানও নেই। তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ,’ দ্য ন্যাশনালকে বলেন কাসেম।

লেবাননের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির অধিকাংশ এলাকায় এখন তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার আশেপাশে।। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় এই তাপ কম হলেও লেবাননের হিসেবে অনেক বেশি। আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত গ্রীষ্মকালগুলোর তুলনায় এবারের গ্রীষ্মকালে লেবাননের তাপমাত্রা অন্তত ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

গরমে পুড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরাকও। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ ঈদের দিন রাজধানী বাগদাদসহ দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অসহনীয় এই গরমকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাট। তেল সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশজুড়ে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে ইরাকে।

একই সমস্যায় ভুগছে লেবাননও। দেশটির লোকজন গত প্রায় দুই দশক ধরে লোডশেডিং ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। এই সমস্যার প্রধান কারণ শাসকগোষ্ঠী ও ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি। ধনী লেবানিজরা বিদ্যুতের জন্য এখন নিজেদের কেনা জেনারেটরের ওপরই ভরসা করেন।

শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোর তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছিল বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর। এমনিতে জুন মাসে কায়রোতে গড়ে যে তাপমাত্রা বিরাজ করে, তার চেয়ে গতকালের তাপামাত্রা ছিল অন্তত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

শনিবার মিসরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আসওয়ানে। শহরটির তাপমাত্রা ছিল ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ব্যাপক তাপপ্রবাহ ও তার ফলে সৃষ্ট গরমজনিত শারীরিক জটিলতা এড়াতে বয়স্ক লোকজন ও শিশুদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মিসরের আবহাওয়া দপ্তর।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ জর্ডানে এখন অলিভ চাষের মৌসুম চলছে। কিন্তু তাপপ্রবাহের কারণে চাষের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির কৃষকরা।

জর্ডানের কৃষক ইয়াসের আল হেমৌদ দ্য ন্যাশনালকে বলেন, ‘এই গরমে ক্ষেতে কাজ করতে গেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই, ট্রাক্টরের ইঞ্জিন বিগড়ে যাওয়ার ভয় আছে।’

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী আম্মান ও তার আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।

সূত্র : দ্য ন্যাশনাল

এসএমডব্লিউ